চারঘাটে মদ্যপানে দুজনের মৃত্যু, পুলিশ বলছে ‘অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন’

রাজশাহী জেলার মানচিত্র
রাজশাহী জেলার মানচিত্র

রাজশাহীর চারঘাটে মদ্যপানে অসুস্থ দুই ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার দুই ঘণ্টার ব্যবধানে এ দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিবারের দাবি, ‘গ্যাস্ট্রিকজনিত’ কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশও একই কথা বলেছে।

তবে একসঙ্গে মদ পান করার পর অসুস্থ হওয়া অন্য একজন দাবি করেছেন, মদ্যপানের কারণেই এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তিনি এখন চারঘাট থানায় সব ধরনের মাদক নির্মূলের দাবি জানাচ্ছেন।

মৃত দুই ব্যক্তি হলেন মাসুদ রানা (৩৫) ও নাদিম ইসলাম (২৮)। মাসুদ রানার বাড়ি উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের নিমপাড়া গ্রামে। নাদিম ইসলামের বাড়ি একই ইউনিয়নের হাবিবপুর গ্রামে। মাসুদ পেশায় একজন ভ্যানচালক ছিলেন। আর নাদিম পড়াশোনা শেষ করে বেকার ছিলেন।

মাসুদ রানাকে সোমবার রাত দুইটার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। আর নাদিম ইসলামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মারা যান। এ ঘটনায় মোহাম্মদ টনি (২৯) নামের আরও এক ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে তাঁকে বাসায় নেওয়া হয়েছে। তিনি এখনো কিছুটা অসুস্থ।
চিকিৎসাধীন টনি নিমপাড়া ইউনিয়নের হাবিবপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

মোহাম্মদ টনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মোটরসাইকেল না থাকায় মাসুদ রানার ভ্যান রিজার্ভ করে এলাকায় চলাফেরা করতেন। আর নাদিম ইসলাম ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ইয়াং জেনারেশন সবাই শখ করে খায়। তাই রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনি মাসুদ রানা, নাদিম ও মেহেদীর সঙ্গে যান। মেহেদী তাঁকে ছোটবেলা থেকে মামা বলে ডাকেন। খুবই কাছের। এই চারজন উপজেলার ঝিকরা গ্রামের মামুন নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে যান। টনি বলেন, ‘আমি সামান্য একটু খেতেই শরীর ঝিমঝিম করে ওঠে। আর বেশি খাইনি। কিন্তু নাদিম ও মাসুদ রানা বেশি পরিমাণে মদ পান করে।’ তিনি বলেন, খারাপ লাগার কারণে তিনি বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে সোফায় বসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বমি করে সব তুলে ফেলেন। শরীর খারাপ ও ঘুমিয়ে থাকার কারণে সোমবার বিছানা থেকে উঠতে পারেননি।

মোহাম্মদ টনি আরও বলেন, তাঁর ধারণা, মদ্যপানের কারণেই তাঁর শরীর খারাপ হয়েছে। মাসুদ ও নাদিম মদ্যপানের কারণেই মারা গেছেন। নাদিমকে কবর দেওয়ার সময় থাকতে পারেননি বলে তিনি কান্নাকাটি করেছেন। তিনি এখন চারঘাট উপজেলা থেকে সব ধরনের মাদক নির্মূলের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।

মাসুদ রানার স্ত্রী সাবিনা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী রোববার রাত আটটার দিকে বাড়িতে এসেছে। মদ খেয়ে এসেছিল কি না আমাকে কিছু বলেনি। রাতে দুটি বিস্কুট ছাড়া আর কিছু খায়নি। গতকাল সারা দিন ঘুমিয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে পেটব্যথা শুরু হলে অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা ভেবে রাত দুইটার দিকে হাসপাতালে নিলে সকালে মৃত্যুবরণ করে।’

চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের পরিবারের লোকজন কেউ মদ্যপানে মারা যাওয়ার কথা বলেননি। তাঁরা বলেছেন, অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। এ ব্যাপারে কোনো মামলাও হয়নি। একসঙ্গে মদ পান করার পরে বেঁচে যাওয়া একজন প্রথম আলোকে ভিডিও বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানালে ওসি বলেন, পুলিশের কাছে কেউ মদ্যপানের কথা বলেননি।