কক্সবাজারের সদর উপজেলায় জোয়ারিখালের ওপর নির্মাণাধীন ভারুয়াখালী-খুরুশকুল সেতু। গত বৃহস্পতিবার তোলা
কক্সবাজারের সদর উপজেলায় জোয়ারিখালের ওপর নির্মাণাধীন ভারুয়াখালী-খুরুশকুল সেতু। গত বৃহস্পতিবার তোলা

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি সেতুর নির্মাণকাজ, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালী-খুরুশকুল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। সেতুর জন্য বরাদ্দ হয় ৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। তিন বছরের মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে প্রায় পাঁচ বছর পার হলেও নির্মাণকাজ শেষ করা যায়নি।

কক্সবাজার সদর উপজেলার দুই ইউনিয়ন ভারুয়াখালী ও খুরুশকুলের মাঝখানে অবস্থিত জোয়ারিখাল নদ। প্রতিদিন ডিঙিনৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। যাত্রীদের ঝুঁকি ও দুর্ভোগ নিরসনে পাঁচ বছর আগে নদটির ওপর একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তবে দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়েও সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করা যায়নি।

বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় বাসিন্দাদের নদটি পারাপারে দুর্ভোগ কাটছে না। বিশেষ করে রোগীদের পারাপারে ভোগান্তি বেশি। বর্ষা মৌসুমে নদটি উত্তাল থাকায় নৌকাডুবিসহ দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। এ সময় চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় দুই পারের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ সাধারণ মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। দুই ইউনিয়নে অন্তত ১০ হাজার একর জমিতে লবণ, চিংড়ি, মাছ ও ধান চাষ করেন বাসিন্দারা। সেতু না থাকায় এসব পণ্য পরিবহনেও অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

জোয়ারিখালের ওপর সেতু নির্মাণের দাবিতে এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৩৯২ মিটার দীর্ঘ ‘ভারুয়াখালী-খুরুশকুল সেতু’ প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন ও এম এ জাহের লিমিটেড। সেতুর জন্য বরাদ্দ হয় ৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোয়ারিখালের ওপর সেতু নির্মাণের দাবিতে এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৩৯২ মিটার দীর্ঘ ‘ভারুয়াখালী-খুরুশকুল সেতু’ প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন ও এম এ জাহের লিমিটেড। সেতুর জন্য বরাদ্দ হয় ৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের ভিত্তিতে দুই দফা সময় বাড়ানো হয়।

সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন। গত শুক্রবার কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালী এলাকায়

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, নদের এক পাশে সেতুর কিছু অংশ দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকজন শ্রমিক সেতুর নির্মাণকাজে নিয়োজিত রয়েছেন। সেতুর ১৩টি স্প্যানের মধ্যে আটটির কাজ শেষ হয়েছে।

নদের দুই পাশে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে লবণ চাষের প্রস্তুতি চলছে। নির্মাণাধীন সেতুর অদূরে ডিঙিনৌকায় লোকজনকে পারাপার করতে দেখা যায়। সরেজমিন কথা হয় ভারুয়াখালীর বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মো. সুলেমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সেতু না থাকায় ছোট নৌকায় করে প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যাচ্ছেন। কক্সবাজার শহর থেকে এলাকার দূরত্ব মাত্র ৯ কিলোমিটার হলেও সড়কপথে যেতে চাইলে ৩৬ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়।

ভারুয়াখালীর বাসিন্দা আবদুল হামিদ কক্সবাজার শহরের একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। সেতু না থাকায় গ্রাম থেকে শহরের কর্মস্থলে পৌঁছাতে তাঁর দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় বেশি লাগছে বলে জানান। আবদুল হামিদ বলেন, দুই-তিনবার গাড়ি বদল করতে হয়। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে, ভোগান্তিও বাড়ছে।

সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত লবণ, চিংড়ি, শাকসবজির ন্যায্যমূল্য থেকে চাষিরা বঞ্চিত হচ্ছেন। মুমূর্ষু রোগীদের যথাসময়ে শহরের হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ইফতেখারুল ইসলাম, ভারুয়াখালীর বাসিন্দা

কক্সবাজার সরকারি কলেজের ছাত্র ও ভারুয়াখালীর বাসিন্দা সাজেদুল ইসলাম বলেন, শীতকালে নদ শান্ত থাকলে ডিঙিনৌকা দিয়ে পার হওয়া যায়। তবে বর্ষাকালে নৌকা নিয়ে পার হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তখন সন্ধ্যা হলে নৌকা পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। কেবল যাতায়াতের এই ভোগান্তির কারণে ভারুয়াখালী-খুরুশকুলের অনেক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

ভারুয়াখালীর বাসিন্দা ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, সেতুটির কাজ শেষ হলে ভারুয়াখালী ও খুরুশকুলের মানুষ ছাড়াও পাশের পিএমখাল, রামুর রশিদনগরের লক্ষাধিক মানুষ এর সুফল পাবেন। সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত লবণ, চিংড়ি, শাকসবজির ন্যায্যমূল্য থেকে চাষিরা বঞ্চিত হচ্ছেন। মুমূর্ষু রোগীদের যথাসময়ে শহরের হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, বছরের পর বছর তিন থেকে চারজন শ্রমিক দিয়ে সেতুর নির্মাণকাজ চালানো হচ্ছে। যে কারণে সেতু নির্মাণে বিলম্ব ঘটছে। তিনি আরও বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এ জাহের লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী সাবেক এক সংসদ সদস্য। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে পলাতক। সেতুর নির্মাণকাজের ওপর এর প্রভাব পড়েছে।

কাজ শেষ করতে না পারার বিষয়ে ঠিকাদারের প্রতিনিধি (সুপারভাইজার) আনিসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান বলেন, পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ করে সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যেই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে।