
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাবা-ছেলেসহ তিনজনকে হত্যার ঘটনার তিন দিন পর দুটি মামলা হয়েছে। দুই মামলাতেই উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক দুজনকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁরা হলেন বাঁশগাড়ী এলাকার বাসিন্দা শান্ত হাওলাদার ও মোতালেব হোসেন। এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে এই দুজনকে আজ সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পরও বাঁশগাড়ী এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা আছে। বাজারঘাটে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাবের সদস্যরা এলাকায় টহল দিচ্ছেন।
মামলার প্রধান আসামি মোস্তাফিজুর রহমান বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি পরপর দুবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ওই ইউপিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কারণে তাঁকে আসামি করা হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে মামলা দুটি কালকিনি থানায় নথিভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ভাস্কর সাহা। তিনি বলেন, তিন খুনের ঘটনায় দুজন বাদী হয়ে আলাদা দুটি মামলা করেছেন। মামলাটি পুলিশ গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে। দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
কালকিনি থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত ইউপি সদস্য আতাউর রহমান ওরফে আক্তার শিকদারের বাবা মতিউর রহমান ওরফে মতিন শিকদার বাদী হয়ে আজ সকালে প্রথমে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানসহ ৬৫ জনের নামে এজাহারভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া আক্তারের অনুসারী নিহত সিরাজুল চৌকিদারের বাবা রশিদ চৌকিদার বাদী হয়ে আরও একটি হত্যা মামলা করেন। এতে মোস্তাফিজুর রহমানসহ ৩৩ জনকে এজাহারভুক্ত ও ৪০ থেকে ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
মামলার বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আক্তার মেম্বারের সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কোনো বিরোধ নেই। সে আমার পরিষদের মেম্বার। এযাবৎকালে যত বরাদ্দ এসেছে, তা সব সদস্যকে সমানভাবে ভাগ করে দিয়েছি। তবুও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে আমাকে প্রধান আসামি করা হলো। আমি ঘটনার সময় এলাকায় ছিলাম না। যাঁরা হত্যার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের ভিডিও ফুটেজ আছে। পুলিশ ফুটেজ দেখে আসামি চিহ্নিত করতে পারে।’
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মধ্যেরচর এলাকায় দেড় শ একর জমি নিয়ে ফারুক মোল্লা ও মেম্বার আক্তার শিকদারের বংশের সঙ্গে ফকির বংশের লোকজনের দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে বিরোধ আছে। এ বিরোধে এখন পর্যন্ত ৫৬ জন খুন হয়েছেন। এই বিরোধের সঙ্গে আমার কোনো ইস্যু নেই। শুধু জলিল ফকিররা আমার নির্বাচন করেছেন, তাই তাঁরা কোনো ঘটনা ঘটলেই ফকির বংশের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে আসামি করেন।’
গত শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের মধ্যেরচর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় হাতবোমার আঘাতে ইউপি সদস্য আক্তার শিকদার (৪২) ও তাঁর ছেলে মারুফ শিকদার (২০) এবং দিনমজুর সিরাজুল চৌকিদার (৩৫) নিহত হন। আহত হন আরও অন্তত ১০ জন। এ সময় বেশ কয়েকটি বসতঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল আমীন আজ বেলা আড়াইটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, তিন খুনের ঘটনায় শান্ত হাওলাদার ও মোতালেব হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদের রিমান্ডের জন্য আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালত রিমান্ড শুনানি শেষে দুই আসামিকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন। এ হত্যার সঙ্গে অন্য যাঁরা জড়িত, তাঁদের তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেও শনাক্তের চেষ্টা চলছে।