ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদী গ্রামে রেলপথ অবরোধ করে নকশি কাঁথা কমিউটার ট্রেনটি আটকে রাখেন এলাকাবাসী। রোববার সকাল ৯টা থেকে ট্রেনটি আটকে আছে
ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদী গ্রামে রেলপথ অবরোধ করে নকশি কাঁথা কমিউটার ট্রেনটি আটকে রাখেন এলাকাবাসী। রোববার সকাল ৯টা থেকে ট্রেনটি আটকে আছে

আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদ

সাড়ে ১১ ঘণ্টা পর ভাঙ্গায় মহাসড়ক ও রেলপথ থেকে অবরোধ উঠল

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে সাড়ে ১১ ঘণ্টা মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করার পর কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আজকের মতো কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল এবং ঢাকা-খুলনা রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এর আগে সকাল ছয়টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের আলগী ইউনিয়নের সোয়াদী বাসস্ট্যান্ড ও হামিরদী ইউনিয়নের মনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কাফনের কাপড় পরে অবরোধ শুরু করা হয়। সকাল আটটা থেকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পুখুরিয়া, হামিরদী ও মাধবপুর বাসস্ট্যান্ড এবং ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবরোধ শুরু হয়।

অন্যদিকে ঢাকা-খুলনা রেলপথে হামিরদী ইউনিয়নের হামিরদী গ্রামে খুলনা ছেড়ে আসা নকশি কাঁথা কমিউটার ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করা হয়। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন হাজারো যাত্রী।

ফরিদপুরের-৪ আসনের অধীন ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে জুড়ে দেওয়ার গেজেট ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এর প্রতিবাদে ৫ সেপ্টেম্বর প্রথমে দুই মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। সেদিনের কর্মসূচি থেকে তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে যাওয়া হয়। কিন্তু দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার অবরোধ শুরু হয়। এরপর মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার পরপর তিন দিন সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।

রেলপথ অবরোধ করায় সকালে ঢাকা ছেড়ে আসা খুলনাগামী ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেন ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে আটকা পড়ে। একই সময় খুলনা ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ‘নকশীকাঁথা কমিউটার’ ট্রেনটি আটকা পড়ে। এতে ট্রেনের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।

ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের মনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ডে কাফনের কাপড় পড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন এলাকাবাসী। আজ রোববার সকাল ৮টায়

সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকোমাস্টার মোহাম্মদ আবুল কাশেম প্রথম আলোকে, সকাল আটটায় ট্রেনটি কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে খুলনার উদ্দেশে রওনা হয়। ১২ বগির ট্রেনটি ৯টা ২৫ মিনিটে ভাঙ্গা বামুনকান্দা এলাকায় ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে আটকা পড়ে।

ট্রেনের পাশাপাশি মহাসড়ক দুটিতেও অবরোধ থাকায় কোনো যান চলাচল না করায় যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। অনেক যাত্রীকে ট্রেন থেকে নেমে তিন কিলোমিটার দূরে ভাঙ্গা গোল চত্বর এলাকার দিকে যেতে দেখা গেছে। অনেকে ট্রেনে বসে কখন যেতে পারবেন, সেই প্রহর গুনছেন।

দিনভর অবরোধে ভোগান্তি

ট্রেনের যাত্রী বজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যাচ্ছিলেন। ভাঙ্গায় এসে আটকা পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘দেশে কোনো সরকার আছে কি না, কীভাবে বুঝব? স্থানীয় একটি সমস্যার জন্য আমাদের কেন ভোগান্তির শিকার হতে হবে?’

ভাঙ্গা রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার রনি ব্যাপারী বলেন, খুলনা ছেড়ে আসা নকশীকাঁথা কমিউটার ট্রেনটি সকাল ৯টা ৫ মিনিটের দিকে ভাঙ্গার হামিরদী এলাকায় জনতা আটকে রাখে। ওই ট্রেন থেকে ভাঙ্গা স্টেশনের দূরত্ব অন্তত পাঁচ কিলোমিটার।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, অবরোধকারীদের মধ্যে অনেক নারীও অংশ নিয়েছেন। তাঁরা লাল পতাকা নাড়িয়ে ট্রেনটি থামান এবং ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেন। তবে অবরোধকারীরা ট্রেনে আটকা পড়া কোনো যাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেননি।

ওই ট্রেনের যাত্রী হামিদ খান বলেন, তিনি খুলনা থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন ট্রেনে। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ছুটি শেষে আজই কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার কথা। সঙ্গে পরিবার-পরিজন আছে। তিনি বলেন, ‘কী করব বুঝতে পারছি না। এখানে এই অবস্থায় বসে আছি। কখন ছাড়া পাব, তার কোনো হাদিস নেই।’

রেলপথ অবরোধের কারণে ঢাকা ছেড়ে আসা খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল থেকে ভাঙ্গা রেলস্টেশনে আটকে ছিল

ট্রেনের আরেক যাত্রী শবনম নেছা ঢাকায় থাকেন। স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন। তিনি শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলেন। আজ ঢাকায় ফেরার পথে ট্রেন অবরোধের কারণে তিনি দুর্ভোগে পড়েছেন। তাঁর সঙ্গে দুই ছেলে আছে। কোনো উপায় না পেয়ে দুই ছেলেসহ ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বিকল্প কোনো বাহনের খোঁজে ভাঙ্গার দিকে রওনা দিয়েছেন।

উপজেলা প্রশাসনের ব্রিফিং

আজ বেলা আড়াইটার দিকে ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, আসন পুনর্নিধারণ নিয়ে যে আন্দোলন চলছে, শুরু থেকে তাঁরা আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। কিন্তু দিনে দিনে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ায় মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। এ কারণে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আজ বিকেল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে। তিনি এ ব্যাপারে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নের জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন।

ইউএনও মিজানুর রহমান আরও বলেন, মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আলগী ও হামিরদী কোনো অবস্থাতেই সালথা–নগরকান্দার সঙ্গে যুক্ত হবে না। দুটি ইউনিয়নের ভোটার নিজ ইউনিয়নেই ভোট দেবেন এবং সেই ভোট ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদে গণনা করা হবে। এ ছাড়া তারা ভাঙ্গার স্বাস্থ্য, শিক্ষা, টিআর–কাবিখা সমাজসেবার যাবতীয় কার্যক্রম ভাঙ্গা উপজেলা থেকে পাবেন। কোনো কাজেই তাদের নগরকান্দা–সালথায় যেতে হবে না।

আগামীকাল অবরোধের ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাঙ্গার দক্ষিণ পাড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সমাবেশ করেন এলাকাবাসী। সমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক ইউপি সদস্য মো. এসকেন্দার মিয়া। তিনি বলেন, ‘একটু আগে ওসি মো. আশরাফ শেখ ও ভাঙ্গা সার্কেলের এএসপি অশিফ ইকবাল এসে আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশের কথা জানিয়ে বলেছেন, “এখনই আন্দোলন বন্ধ করতে হবে।” কিন্তু আমরা রাজি হইনি। আমরা জানিয়েছি, তাঁদের সম্মানে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় রাস্তা ও রেললাইন খুলে দেব। তবে আগামীকাল আবার অবরোধ চলবে।’

এসকেন্দার মিয়া আরও বলেন, ‘ভাঙ্গার ইতিহাস ও ঐতিহ্য আমাদের রক্তে মিশে আছে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিটি গণআন্দোলনে ভাঙ্গার মানুষ জীবন দিয়েছে, আন্দোলন করেছে। তাই আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত নগরকান্দায় নতুন আসনে আমরা যাব না। ভাঙ্গার মাটি আমরা কোনোভাবেই ছাড়ব না।’