চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পেতে স্থানীয় রাজনীতির চলমান দুটি ধারার অনুসারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। নিজেদর মতো করে যোগাযোগ ও তদবির শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। এরই মধ্যে পদপ্রত্যাশী ১ হাজার ৪০০ জন জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দেওয়ার শেষ দিনে গভীর রাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যালয়ে ছিল নেতা–কর্মীদের ভিড়।
নগর ছাত্রলীগের কমিটির জন্য পদপ্রত্যাশী নেতা–কর্মীরা মূলত দুটি শিবিরে বিভক্ত। তাঁদের একটি পক্ষ হচ্ছে প্রয়াত সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। এই পক্ষ বর্তমানে মহিউদ্দিনপুত্র শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী বলে নিজেদের পরিচয় দেন। অপর পক্ষটি হলো নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলয়ের।
চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতিতে দেড় যুগ ধরে এই দুটি ধারা চলে আসছে। আওয়ামী লীগের পর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও এই বিভক্তি এড়াতে পারেনি। নগর যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ—সবখানে রয়েছে দুই বলয়ের প্রভাব। অতীতে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠনের সময় দুই পক্ষের তৎপরতা দেখা গেছে। এবার ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে দুই ধারার পদপ্রত্যাশীরা তাঁদের নেতাদের আনুকূল্য পেতে চাইছেন।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদপ্রত্যাশীরা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। আমরা সবাইকে স্বাগত জানিয়েছি। বিপুল উৎসাহ–উদ্দীপনা ছিল। গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত সিভি জমা নেওয়া হয়েছে। কী পরিমাণ পড়েছে, তা আজকের মধ্যে গণনা শেষ হবে। তবে হাজারের অনেক বেশি। এখন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। সম্মেলন কিংবা কর্মিসভা করার ইচ্ছা রয়েছে আমাদের।’
এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি নগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্র থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়ার কাজ শুরু হয়, শেষ হয় গতকাল রাতে। এর আগে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের জন্যও জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয়। ওই কমিটিতে প্রায় ৪০০ পদপ্রত্যাশী আবেদন করেন। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে। ওই কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার অনেকগুলো সাংগঠনিক ধাপ পার হয়েছে।
নগর ছাত্রলীগের কমিটির জন্য ইতিমধ্যে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলয়ের পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকেই শীর্ষ দুটি পদের জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নগরের কলেজগুলোর পাশাপাশি থানা কমিটির নেতারাও আছেন।
তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন নগর ছাত্রলীগের সদস্য মোশারাফুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম কলেজের মাহমুদুল করিম, মনির ইসলাম, আনোয়ার পলাশ, মহসিন কলেজের মায়মুন উদ্দীন, চান্দগাঁও থানার মো. নূরুন নবী, ডবলমুরিং থানার রাকিব হায়দার, ওমরগণি, এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের জাহিদুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন, সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের আশীষ সরকার, মুহাম্মদ তাসিন, ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের মীর মুহাম্মদ ইমতিয়াজ প্রমুখ।
জানতে চাইলে সভাপতি পদপ্রত্যাশী মাহমুদুল করিম বলেন, ‘আমাদের অনেকেই সিভি জমা দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। তিনি ও কেন্দ্রের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক যেটা ভালো মনে করবেন, সেভাবে কমিটি হবে। আমাদের প্রত্যাশা, ত্যাগী ও কর্মঠ কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে।’
অন্যদিকে আ জ ম নাছির অংশের বর্তমান নগর ছাত্রলীগের উপধর্মবিষয়ক সম্পাদক রাশেদ চৌধুরী, উপছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক এস এম হুমায়ন কবির আজাদ, নগর ছাত্রলীগের নেতা ফাহাদ আনিস ও খালেকুজ্জামান, কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগের সভাপতি অনিন্দ্য দেব, কলেজ ছাত্রলীগ নেতা বোরহান উদ্দিন প্রমুখ জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
শীর্ষ পদপ্রত্যাশী অনিন্দ্য দেব বলেন, ‘আমরা সবাই নাছির ভাইয়ের (আ জ ম নাছির উদ্দীন) সুপারিশে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছি। আন্দোলন–সংগ্রামে আমরা ছিলাম, থাকব।’
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক—এ দুই পদের জন্যই জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন রাশেদ চৌধুরী। জানতে চাইলে রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষ সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছে। কারও অবদান কম নয়। আমরা নাছির ভাইয়ের রাজনীতি করি। আরেক পক্ষ মহিবুল হাসান চৌধুরীর দিকে আছে। সব পক্ষকে সমন্বয় করে কমিটি করা উচিত। তাতে রাজনীতিতে সমতা ও সমবণ্টন হবে।’
দুটি পক্ষের সমন্বয় হবে কি না, জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক মুজিবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের রাজনীতির একটা দীর্ঘ ইতিহাস–ঐতিহ্য আছে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের রাজনীতির পরিবেশ–পরিস্থিতি মাথায় রাখা হবে আশা করি। কেন্দ্রের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক সেটা ভালো জানবেন।’
এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেন, ‘বিভিন্ন পক্ষ থাকতে পারে। কিন্তু আমরা বলয়ের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। সবাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতি করি। আপসহীন, ত্যাগীদের সমন্বয়ে একটা সুন্দর কমিটি চট্টগ্রামের জন্য আমরা করতে চাই।’
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৩ সালে গঠিত চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের ১ বছরের কমিটি ১০ বছর পার করেছে। ওই কমিটির ২৯১ জনের অধিকাংশ নেতা এখন বিবাহিত। ছাত্রত্ব নেই বেশির ভাগের।