পটুয়াখালীর দুমকিতে ওই কলেজছাত্রীর জানাজায় অংশ নেওয়ার আগে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। রোববার সন্ধ্যায়
পটুয়াখালীর দুমকিতে ওই কলেজছাত্রীর জানাজায় অংশ নেওয়ার আগে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। রোববার সন্ধ্যায়

জুলাই শহীদের মেয়ের মৃত্যু

সময়মতো বিচার হলে সে হয়তো পৃথিবী থেকে বিদায় নিত না: রিজভী

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘কলেজছাত্রীর (নাম) এই মৃত্যু গোটা জাতির সামনে একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার বলতে একটু দ্বিধা হয়, তবু বলতে হয়, সময়মতো বিচারপ্রক্রিয়া নিশ্চিত হলে সে হয়তো আজকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিত না।’

জুলাই আন্দোলনে এক শহীদের মেয়ের (১৭) জানাজায় অংশ নেওয়ার আগে আজ রোববার সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকিতে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর আদাবর থানার শেখেরটেক এলাকার বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে গত ১৮ মার্চ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে। আজ রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যা সাতটায় মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্রের মর্মবাণী হচ্ছে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। আদালত হচ্ছে সেই জায়গা, মানুষ অন্য কোথাও বিচার না পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়। সেটা হচ্ছে মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। সেই বিচারব্যবস্থা থেকে যদি মানুষ বিচ্যুত হয়, বঞ্চিত হয়, তাহলে সেই সমাজে নৈরাজ্যের কালো অন্ধকার নেমে আসবে। সেই সমাজের মধ্যে পরিব্যাপ্ত এক ভয়ংকর হতাশা বহমান থাকবে।’

রিজভী আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের পরেও এখনো কেন এমন পরিস্থিতি বিরাজ করবে? এখনো কেন পাড়া-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে বখাটে ও সমাজবিরোধীরা আধিপত্য বিস্তার করবে? তারা যদি এখনো বিস্তার করে তাহলে গণতন্ত্র আইনের শাসন কোনো দিনও প্রতিষ্ঠিত হবে না। আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’

রিজভী বলেন, ‘যে পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী ব্যক্তি জুলাই-আগস্টের মহাবিপ্লবে জনগণের পক্ষে নিজের বুক পেতে বুলেট বরণ করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন, এই এক শোক না কাটতে আরেকটি শোকাবহ ঘটনা ঘটে গেল। তাঁর মেয়ে (নাম) পৃথিবী থেকে চলে গেল। এই যে শোক—একটি পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা এবং উপযুক্ত শব্দগুলো আমার জানা নেই।’

গত ১৫-১৬ বছরে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অনেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘অনেকেই নানাবিধ নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আয়নাঘর থেকে শুরু করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন অনেকেই। আমরা সেই ভয়াবহ পরিস্থিতিগুলো দেখেছি। সেখান থেকে মুক্তির জন্য যে সর্বশেষ গণ-অভ্যুত্থান এবং এক প্রচণ্ড পৃথিবী কাঁপানো একটি অভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছে। সেখানে এই কলেজছাত্রীর (নাম) বাবা অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর সেই অবদান একটি গ্রামের একটি ব্যক্তির ছোট্ট অবদান নয়, তাঁর অবদানের মধ্য দিয়ে গোটা জাতি নিষ্কৃতি পেয়েছে এক ভয়ংকর জগদ্দল পাথর থেকে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে যে এই গ্রামে এসেছি, তার সাহসটুকু জুগিয়েছেন এই ছাত্রীর (নাম) শহীদ পিতা। এত ছাত্র-তরুণের জীবন চলে গেল। অথচ বিচারপ্রক্রিয়া সঠিক জায়গায় আজও আসেনি।’

পরে কলেজছাত্রীর জানাজায় অংশ নেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, সহসভাপতি মশিউর রহমান, পটুয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রশীদ (চুন্নু মিয়া), সদস্যসচিব স্নেহাংশু সরকার, জেলা বিএনপির নেতা মজিবুর রহমানসহ জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।