কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপের প্যারাবন ধ্বংস করে তৈরি চিংড়িঘেরে ইউএনও মো. হেদায়েত উল্যাহর নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান চালান যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। আজ দুপুরে
কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপের প্যারাবন ধ্বংস করে তৈরি চিংড়িঘেরে ইউএনও মো. হেদায়েত উল্যাহর নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান চালান যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। আজ দুপুরে

সোনাদিয়ায় তিনটি চিংড়িঘেরের স্থাপনা উচ্ছেদ, সরঞ্জামসহ মোটরসাইকেল জব্দ

কক্সবাজারের মহেশখালীর পরিবেশ সংকটাপন্ন সোনাদিয়া দ্বীপে আরও তিনটি চিংড়িঘেরের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে চার ঘণ্টাব্যাপী চলা অভিযানে প্যারাবন কেটে নির্মিত ঘেরগুলোর অস্থায়ী স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়।

অভিযানে গাছ কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম, একটি মোটরসাইকেল ও একটি ইঞ্জিনচালিত নৌযান জব্দ করা হয়েছে। তবে এবারও প্যারাবনের দখলদার ও অবৈধ চিংড়িঘেরের মালিকদের কাউকে আটক করা হয়নি। কোনো চিংড়ি ঘেরের বাঁধও কেটে দেওয়া হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহর নেতৃত্বে এ অভিযানে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, পুলিশ, আনসার ও বন বিভাগের শতাধিক সদস্য অংশ নেন।

এর আগে শুক্রবারও সেখানে অভিযান চালিয়ে তিনটি চিংড়িঘেরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তবে দুই দিনব্যাপী অভিযানে কারও বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার বা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ইউএনও মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকের অভিযানে তিনটি চিংড়িঘেরের চারটি অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ এবং পানি চলাচলের তিনটি স্লুইসগেট নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।’

তবে ঘেরগুলোর বাইরের বেড়িবাঁধগুলো এখনো অপসারণ করা হয়নি। এ বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘সোনাদিয়ায় গড়ে ওঠা ৪৮টি চিংড়িঘেরের প্রায় ২০ কিলোমিটার বাঁধ স্থায়ীভাবে অপসারণে আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকার প্রয়োজন। এর জন্য বরাদ্দ চেয়ে প্রাক্কলন তৈরির কাজ চলছে।’

ইউএনও বলেন, এর মধ্যে প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণ এবং আগুন দিয়ে প্যারাবন পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বন বিভাগ মামলা করছে না।

এ প্রসঙ্গে মহেশখালীর গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আয়ুব আলী বলেন, প্যারাবন কেটে যেসব চিংড়িঘের তৈরি হয়েছে, এসব প্যারাবন বেজার আওতাধীন ছিল। বেজা থেকে এখনো তা বন বিভাগকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়নি। তাই মামলা করতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ইউএনও বন বিভাগকে চিঠি দিলেও মামলা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে ইউএনওকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।

সোনাদিয়ায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা চিংড়িঘের। আজ দুপুরে

কক্সবাজার শহর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তরে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ছোট্ট দ্বীপ সোনাদিয়া। সোনাদিয়া দ্বীপটি ২০০৬ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)’ হিসেবে ঘোষণা করে। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত দ্বীপটি লাল কাঁকড়া, কাছিম ও বিরল প্রজাতির পাখির আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।

গত বছর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বেজা নিয়ন্ত্রিত তিন হাজার একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করে ৩৭টির বেশি চিংড়িঘের নির্মাণ করলেও বেজা দখলদারের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেনি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে এর পরবর্তী কয়েক মাসে আরও এক হাজার একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করে সাতটি চিংড়িঘের নির্মাণ করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় ‘প্যারাবন পুড়িয়ে নতুন চিংড়িঘের’ শিরোনামে সচিত্র সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এবার প্রকাশ্যে পেট্রল ঢেলে গাছপালা পুড়িয়ে এই ঘেরগুলো করা হয়েছে।