
‘ভাবছিলাম, আমার নাতি ভালা হইয়া যাইব। কিন্তু আল্লাহ নিয়া গেল আমার নাতিরে। যদি বাঁচাইতে না যাইত, তাইলে তার মরণ হয়তো আইত না। এমন মরণ সবার ভাগ্যে অয় না।’
বিলাপ করে কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরের টঙ্গীতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়্যারহাউস পরিদর্শক (কর্মকর্তা) খন্দকার জান্নাতুল নাঈমের (৩৭) নানি অজুফা বেগম (৮০)।
খন্দকার জান্নাতুল নাঈমের মৃত্যুর ঘটনায় শেরপুরের নকলা উপজেলার গৌড়দ্বার ইউনিয়নে তাঁর নিজ গ্রাম পূর্ব লাভায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তবে শোকের পাশাপাশি গ্রামবাসী তাঁকে নিয়ে গর্ব করছেন। কারণ, তিনি মানুষের জীবন বাঁচাতে প্রাণ দিয়েছেন।
আজ শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন বাড়িতে কেউ না থাকায় উঠানে ঘাস ও ময়লা জমে গিয়েছিল। শ্রমিকেরা সেসব পরিষ্কার করছেন। অন্যদিকে পারিবারিক কবরস্থানে চলছে দাফনের প্রস্তুতি। কবর খোঁড়া হচ্ছে, মসজিদ থেকে এনে রাখা হয়েছে খাটিয়া। দূরদূরান্ত থেকে আত্মীয়স্বজন আসছেন। গ্রামবাসী অপেক্ষা করছেন তাঁর মরদেহের জন্য।
রাজধানীতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরে খন্দকার জান্নাতুল নাঈমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় আজ দুপুরে। রাত ১০টায় পূর্ব লাভা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দ্বিতীয় জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে। তাঁর মরদেহ বহনকারী গাড়ি ইতিমধ্যে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
প্রতিবেশী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, নাঈম ভালো মনের মানুষ ছিলেন। ছুটিতে বাড়ি এলেই সবার খোঁজখবর নিতেন এবং আন্তরিকভাবে কথাবার্তা বলতেন।
জান্নাতুল নাঈমের চাচা খন্দকার এনামুল হক বলেন, ‘তার এভাবে মৃত্যু হতো না, যদি সে বীরত্বের সঙ্গে সহকর্মীদের বাঁচাতে না এগিয়ে যেত। আমরা তাকে নিয়ে গর্ববোধ করছি। সে উপজেলাবাসীর গর্ব।’
২২ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর রাসায়নিকের গুদামে আগুন নেভাতে গিয়ে খন্দকার জান্নাতুল নাঈম দগ্ধ হন। তাঁর শরীরের ৪২ শতাংশ পুড়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তাঁর মৃত্যু হয়।