
ফরিদপুরে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদ ও পুরোনো সীমানা বহালের দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি আজ সোমবার দ্বিতীয় দিনে পড়েছে। তবে আজ সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয়েছে। তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে আন্দোলনকারীরা মহাসড়কের পাশে অবস্থান নিয়েছেন। ঢাকা–খুলনা ও ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করছে; তবে তা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম।
৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা করে নির্বাচন কমিশন। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে। এরপর থেকে ভাঙ্গায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল রোববার থেকে তিন দিনের সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও রেল অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে স্থানীয় জনতা।
ভাঙ্গায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পুখুরিয়া, মাধবপুর, হামিরদী এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ ও সুয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আজ সকালে আন্দোলনকারীরা আসেন। তবে পুলিশের তৎপরতায় তাঁরা সড়কের পাশে সরে দাঁড়ান। এতে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
সকাল নয়টার দিকে ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কের পুকুরিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে আন্দোলনকারীদের দেখা যায়নি। তবে পুলিশ সদস্যদের মহাসড়কে টহল দিতে দেখা যায়।
পুকুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় শ্রমিক মজিবর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল থেকে এখানে কোনো আন্দোলনকারীকে দেখা যায়নি।
পুকুরিয়া বাজার বাসস্ট্যান্ডের চা–দোকানি টুটুল ব্যাপারী বলেন, ‘ভাবগতি দেখে মনে হচ্ছে, আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নামতে পারবে না।’
সকাল সাড়ে সাতটায় ঢাকার গুলিস্তান থেকে গোল্ডেন লাইনের বাসটি চালিয়ে এসেছিলেন চালক মো. জাহাঙ্গীর। সকাল নয়টার দিকে তিনি পুকুরিয়া বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করেন। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে পুকুরিয়া পর্যন্ত সড়কটি ফাঁকা আছে।
পুখুরিয়ার কিছুটা (ভাঙ্গার দিকে) দূরে গিয়ে হামিরদী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কের দুই পাশে আন্দোলনকারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন। সেখানে পুলিশ সদস্যরা আছেন। সড়কে যানবাহন চলাচল করছে।
ঢাকা–খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ডে সকালের দিকে আন্দোলনকারী অবরোধ করার চেষ্টা করেন। তবে। পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন তাঁদের সরিয়ে দেন। মনসুরাবাদে বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যবসায়ী পলাশ রানা বলেন, মহাসড়কের আশপাশে আন্দোলনকারীরা অবস্থান করছেন। যানবাহন তেমন চলছে না। ঢাকার দিকে থেকে যানবাহন বেশি যাচ্ছে। তবে খুলনা বা যশোরের দিক থেকে যানবাহন আসছে কম।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে জনগণের ভোগান্তি না হয়। আন্দোলনকারীরা এখন রাস্তার পাশে অবস্থান করছেন, মহাসড়ক খালি রাখা হয়েছে। মহাসড়ক সচল রাখতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য কাজ করছেন। সকাল নয়টা পর্যন্ত কেউ সড়ক অবরোধ করেননি। তারা ব্যানার নিয়ে মহাসড়কের পাশে অবস্থান নিয়েছেন।’
এদিকে গতকাল রেলপথ অবরোধের কারণে ভাঙ্গায় সুন্দরবন এক্সপ্রেস, নকশিকাঁথা কম্পিউটার ট্রেন এবং মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজবাড়ীতে থেমে ছিল। বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নিলে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
প্রস্তাবিত ভাঙ্গা রেলস্টেশনের উপপরিদর্শক সাফুর আহমেদ বলেন, ভাঙ্গা হয়ে রাজবাড়ী-ঢাকা ও ঢাকা-খুলনা রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে। সকাল ছয়টার দিকে রেলপথের হামিরদী অংশে কিছু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের বুঝিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। সকালে নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকায় গেছে। একটু পরে সুন্দরবন এক্সপ্রেস খুলনায় যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আন্দোলনকারী প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনের জেরে দ্রুত বিচার আইনের মামলায় দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতামা আসামি করা হয়েছে আরও ১৫০ জনকে। এতে তাঁদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাস্তায় নামলে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করতে পারে। তবে আন্দোলনকারীরা মহাসড়কের আশপাশেই অবস্থান করছেন। যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত তাঁরা নিতে পারেন।