অস্ত্রোপচার কক্ষে রোগীকে রেখে স্বাস্থ্যকর্মীর ‘টিকটক’ ভিডিও, সিলগালা

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকের অস্ত্রোপচার কক্ষে রোগীকে রেখে স্বাস্থ্যকর্মীর একটি ‘টিকটক’ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল বুধবার রাত থেকে অনেকে ভিডিওটি নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করে সমালোচনা শুরু করেন। বিষয়টি জানার পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে অভিযান চালিয়ে ওই ক্লিনিকের অস্ত্রোপচার কক্ষ সিলগালা করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবুল হাসনাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ভিডিওর মাধ্যমে রোগীর গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। ক্লিনিকটির অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ওই বেসরকারি ক্লিনিকের নাম ‘প্রত্যাশা ক্লিনিক’। ক্লিনিকটি লোহাগড়া উপজেলার ফুল কাজীর মোড়ে অবস্থিত। অস্ত্রোপচার কক্ষে টিকটক ভিডিও বানানো ওই ব্যক্তির নাম প্রিয়া বেগম। তিনি নার্সের সহকারী হিসেবে ওই ক্লিনিকে কাজ করেন। ঘটনার পর তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একজন রোগী অস্ত্রোপচার কক্ষে শুয়ে আছে। শরীরের ওপর রক্তমাখা কাপড়। পাশে অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম। সেখানে দাঁড়িয়ে রোগীর শরীর স্পর্শ করে নার্সের মতো পোশাক পরা এক নারী ভিডিও তৈরি করছেন। ভিডিওর সঙ্গে রয়েছে মিউজিক।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এতে সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও কর্মীর বিচারের দাবি করা হয়। মিনারুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, প্রথমত, তাঁকে এই পেশা থেকে চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, তাঁকে মা-বোনের সম্মান নষ্ট হওয়ার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তৃতীয়ত, তাঁকেসহ ওই নার্সিং হোমের মালিককে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রিয়া বেগম ভিডিও করা অন্যায় হয়েছে বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি অন্যায় করেছি। আর কখনো করব না। ভিডিওগুলো ডিলিট করে দিয়েছি।’

প্রত্যাশা ক্লিনিকের মালিক মো. সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ওই কর্মী দুই থেকে তিন মাস আগে ক্লিনিকে যোগদান করেছেন। তাঁর এ কাজে তিনি নিজেই লজ্জিত। এ ব্যাপারে তাঁর তেমন কিছুই বলার নেই।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবুল হাসনাত বলেন, রোগীর গোপনীয়তা রক্ষার দায়িত্ব ছিল তাঁদের। অথচ রোগীর ভিডিও প্রকাশ করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন তিনি। ওই রোগী ও তাঁর পরিবার চাইলে ভিডিও করা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।