
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর থেকে টানা চার দিন ধরে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় বাস মালিক সমিতি। এরপর থেকে এই তিন জেলার কোনো দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে না।
এ অবস্থায় আজ সোমবার দুপুরের ঢাকার গাবতলীতে বাস মালিক ও শ্রমিকদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, বৈঠকে সমাধান আসতে পারে।
এদিকে টানা চার দিন ধরে বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীরা সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যাত্রীদের অভিযোগ, মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্বের খেসারত দিতে হচ্ছে তাঁদের। কেউ জরুরি প্রয়োজনে ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন যানবাহনে গন্তব্যে যাচ্ছেন। আবার অনেককে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে প্রাইভেট কার বা স্থানীয় বাসে যেতে হচ্ছে।
রাজশাহীর শিরোইল এলাকায় ঢাকাগামী বাসস্ট্যান্ডে আজ সকালেও যাত্রীদের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। পবার দামকুড়া এলাকার আবদুর রহিম সকাল পৌনে ১০টার দিকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে আসেন। বাস না পেয়ে তিনি স্থানীয় একটি বাসে ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে টিকিট কাটেন। তিনি বলেন, ‘আগেই জেনেছি, রাজশাহী থেকে বাস চলছে না। তবু আসলাম। কারণ, ঢাকায় যাওয়া জরুরি। এখন স্থানীয় বাসে যেতে হচ্ছে ৬০০ টাকা দিয়ে। অথচ এই ভাড়া সর্বোচ্চ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।’
আবদুল হালিম নামের আরেক যাত্রী পড়েছেন আরও বিড়ম্বনায়। তিনি অনলাইনে দূরপাল্লার একটি বাসের টিকিট কাটেন। আজ সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখেন কাউন্টার বন্ধ, বাসও নেই। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অনলাইনে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে মানে বাস চালু থাকবে। কিন্তু এসে দেখি, সব বন্ধ। আমাকে কেন হয়রানি করা হবে? আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।’
বাসমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মাসেই একাধিকবার মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্বে বাস চলাচল বন্ধ হয়েছে। ৭ সেপ্টেম্বর বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকেরা তিন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস চালানো বন্ধ করেন। দুই দিন পর মালিকদের আশ্বাসে তাঁরা বাস চালু করেন; কিন্তু প্রত্যাশিত হারে বেতন না বাড়ায় আবার ২২ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল পর্যন্ত কেবল একতা ট্রান্সপোর্ট ছাড়া অন্য কোনো দূরপাল্লার বাস চলেনি। পরে বেতন বাড়ানো হলেও তা কার্যকর না হওয়ায় নতুন করে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ফের বাস বন্ধের ঘোষণা আসে।
উত্তরবঙ্গ বাস মালিক সমিতির মহাসচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় পরিবহন নেতাদের সঙ্গে গতকাল মালিকদের বৈঠক হয়েছে। আজ আবারও সভা হবে। এখানে রাজশাহী অঞ্চলের বাসমালিকেরাও থাকবেন। সভার পর বোঝা যাবে, বাস চলবে কি না।
রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২৩ সেপ্টেম্বর আমাদের আন্দোলনের পর ঢাকায় এক সভায় বেতন বাড়ানোর চুক্তি হয়েছিল; কিন্তু সেই চুক্তি না মেনে মালিকেরা গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাস বন্ধ করে দেন। এখন যে ভোগান্তি হচ্ছে, সেটি শ্রমিকদের কারণে নয়, মালিকদের কারণে। আজ ঢাকায় মালিক-শ্রমিকদের সভা হবে বলে শুনেছি। আমরা আলোচনায় রাজি আছি। তবে সেটি অবশ্যই শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করে হতে হবে।’