
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাম্প্রতিক সময়ে কুকুরের উৎপাত বেড়েছে। একাডেমিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ কিংবা আবাসিক হল—সব জায়গাতেই দেখা যায় তাদের চলাচল। কুকুরের কারণে আতঙ্কিত হচ্ছেন শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা; কেউ কেউ আক্রমণের শিকারও হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি আলোচনায় এলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রাণিপ্রেমী শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এনেছেন মানবিক সমাধানের পথে।
প্রথমবারের মতো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে কুকুর নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক ও মানবিক উদ্যোগ– বন্ধ্যত্বকরণ (স্পে-নিউটার) ও টিকাদান কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রাণিপ্রেমী শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘স্নেহটেইল’-এর আয়োজনে এই কার্যক্রম পরিচালনা করবে বিশেষায়িত দল ‘ফারি ফ্রেন্ডস ফাউন্ডেশন’। ১৬ অক্টোবর তারা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কুকুরগুলোর বন্ধ্যত্বকরণ অস্ত্রোপচার শুরু করবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করেছে। দুটি কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে—একটি আগত দলের আবাসনের জন্য, অন্যটি পোস্ট অপারেটিভ কেয়ার ইউনিট হিসেবে। অস্ত্রোপচারের পর দুই দিন কুকুরগুলোর খাবার সরবরাহ এবং পর্যবেক্ষণের জন্য একজন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
স্নেহটেইলের প্রতিষ্ঠাতা তামান্না রহমান বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসে ৬০ থেকে ৭০টি কুকুর আছে। অনেক সময় এসব কুকুর শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে বা আক্রমণাত্মক আচরণ করে। আবার অনেক শিক্ষার্থী কুকুরগুলোকে খাবার দেন। তাঁরা এমন একটি উদ্যোগ নিয়েছেন, যাতে মানুষ ও প্রাণী উভয়ই নিরাপদে থাকতে পারে। প্রাণী নিধনের পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণ ও সহাবস্থানের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সবচেয়ে মানবিক পথ।
তামান্না রহমান আরও বলেন, ইতিমধ্যে কুকুরগুলো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এরপর বন্ধ্যত্বকরণ অস্ত্রোপচার ও র্যাবিস ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। অস্ত্রপচারের পর প্রতিটি কুকুরের গলায় পরিচয় বেল্ট পরানো হবে এবং কানের একটি অংশ কেটে চিহ্নিত করা হবে, যাতে সহজে বোঝা যায়, কুকুরটি নিরাপদ ও বন্ধ্যত্ব করা। কুকুরের পাশাপাশি বিড়ালগুলোকেও র্যাবিস ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষার্থীরা যে সচেতনতা, দায়িত্ববোধ ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার। প্রশাসন এই উদ্যোগে পূর্ণ সহযোগিতা করছে। এর ফলে ক্যাম্পাস আরও নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।