জাতীয় নাগরিক পার্টির পথসভা। আজ বুধবার কুমিল্লা টাউন হল মাঠে
জাতীয় নাগরিক পার্টির পথসভা। আজ বুধবার কুমিল্লা টাউন হল মাঠে

কুমিল্লায় হাসনাত আবদুল্লাহ

যখন মানুষ আগুনে পুড়ছে, তখন আওয়ামী লীগ এসেছে আলুপোড়া দিতে

রাজধানীর উত্তরায় প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি ঢাকায় যখন মানুষ আগুনে পুড়ছে, তখন সেখানে আওয়ামী লীগ এসেছে আলুপোড়া দিয়ে খেতে।’

আজ বুধবার সন্ধ্যার আগে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে এনসিপির পথসভায় হাসনাত আবদুল্লাহ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আপনি বিএনপি করেন, জামায়াত করেন, আমার সমস্যা নাই, কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতা আমরা মেনে নেব না। ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা সকলে ঐক্যবদ্ধ হউন।’

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত এবং আহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে কুমিল্লায় নিজেদের পদযাত্রাকে শোক র‍্যালি হিসেবে ঘোষণা দেন এনসিপির নেতারা। সমাবেশের শুরুতে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

মাইলস্টোনে দুর্ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, লাশের সংখ্যা নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, সেটিও স্পষ্ট করতে হবে।

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, ‘কুমিল্লায় বিএনপিকে নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়েছে, জামায়াতকে নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়েছে। এই কুমিল্লার স্বার্থে, বাংলাদেশের স্বার্থে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রিয় মা-বোনেরা কোনোভাবে যদি আওয়ামী লীগ ফিরে আসে, আপনাদের চার কোটি সন্তানকে বাঁচতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের সময় আমরা দেখেছি মন্দিরের মধ্যে পবিত্র কোরআন রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা হয়েছে।’

‘জাতীয় সংকটের’ কারণে এনসিপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব কুমিল্লার কর্মসূচিতে আসতে পারেননি জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা এই কুমিল্লায় আবার আসব। আপনাদের এনসিপিকে কুমিল্লায় সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। এনসিপির ক্যান্টনমেন্ট হবে এই কুমিল্লা। আন্দোলনের সময় ১১ জুলাই এই কুমিল্লার রাস্তা থেকেই প্রথম প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল। এই কুমিল্লায় প্রথম হামলা করা হয়েছিল আন্দোলনের সময়। স্বৈরাচার হাসিনার সবচেয়ে দুশ্চিন্তা ও নির্ঘুমের কারণ ছিল কুমিল্লা।’

কুমিল্লা বিভাগ প্রসঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘কুমিল্লার নামের আগে কু রয়েছে, তাই হাসিনা বলেছে এই কুমিল্লা নামে বিভাগ করা যাবে না। আমরা হাসিনাকে উৎখাত করেছি এবং কুমিল্লা নামেই বিভাগ হবে। বাংলাদেশের মধ্যে কুমিল্লা সব সময় রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার হয়েছে। কুমিল্লার মানুষ আত্মনির্ভরশীল। রাষ্ট্রীয় কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি কুমিল্লায়। কুমিল্লার মানুষ বিদেশে থাকে, নিজ যোগ্যতায় চাকরি পায়, নিজ যোগ্যতায় মাথাপিছু আয় বেশি, তাই কুমিল্লার রাস্তাঘাট থেকে অবকাঠামো নিজ উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে, রাষ্ট্রের কোনো অর্থ দিয়ে সেগুলো হয়নি। কুমিল্লায় যেগুলো বিনিয়োগ হয়েছে, সেগুলো একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের পকেট ভারী করার জন্য করা হয়েছে।’

১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু করেছে এনসিপি। এর অংশ হিসেবে বুধবার সকালে চাঁদপুর এবং বিকেলে কুমিল্লা আসেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা প্রথমে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ৩৮ জনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর বিকেল ৫টার দিকে নগরের টমছমব্রিজ এলাকা থেকে শোক র‍্যালি শুরু হয়। নগরের সালাউদ্দিন মোড়, কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর হয়ে টাউন হলে গিয়ে শোক র‍্যালি শেষ হয়। এরপর সেখানে শুরু পথসভা।

টাউন হল মাঠের সমাবেশ হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘কুমিল্লা ফ্লাইওভার রাষ্ট্রীয় অপচয়ের নিদারুণ নিদর্শন। এই ফ্লাইওভার মানুষের কোনো কাজে আসেনি। আগে যেমন জ্যাম ছিল, এখনো তেমনি রয়ে গেছে। কুমিল্লার মানুষ রেমিট্যান্স যোদ্ধা, তাঁরা দেশকে সমৃদ্ধ করছেন। কুমিল্লার মানুষকে বারবার রাষ্ট্রীয়ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে, আমরা সেই বঞ্চনার অবসান চাই। রাষ্ট্রকে এই কুমিল্লার বিষয়ে সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করতে হবে।’

‘এক চাঁদাবাজ খেদালে আরেক চাঁদাবাজ এসে হাজির হয়’

সমাবেশে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, দেশে মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই, এক চাঁদাবাজ খেদালে আরেক চাঁদাবাজ এসে হাজির হয়।

আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা ২০০ বছর লড়াই করে ব্রিটিশদের খেদিয়েছে যেন পরবর্তী প্রজন্ম শান্তির এবং নিরাপদ জীবন পায়। আমাদের পূর্বপুরুষেরা পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে আলাদা করেছে, যাতে করে পরবর্তী প্রজন্ম নিরাপদ বাংলাদেশে বসবাস করতে পারে। একইভাবে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিদায় করা হয়েছে নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজও আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।’

এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘রাস্তায় নিরাপত্তা নেই, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি আমাদের চাপা দিয়ে চলে যায়। হাসপাতালে নিরাপত্তা নেই, আমরা ভালো চিকিৎসা পাই না। শ্রেণিকক্ষে নিরাপত্তা নেই, বিমান এসে আমাদের ছাত্রছাত্রী ভাইবোনদের হত্যা করে। আমাদের নিরাপত্তা ঘরে নাই, সেখান থেকে ধরে নিয়ে গুম করে হত্যা করা হয়। আমাদের ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নেই, তাঁদের চাঁদা না দিলে রাস্তায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আমরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বারবার জীবন দিয়েছি, কিন্তু দেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এক চাঁদাবাজ খেদালে আরেক চাঁদাবাজ এসে হাজির হয়। যেই বিমান দিয়ে দেশের মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা, সেই মেয়াদোত্তীর্ণ বিমান আমার দেশের মানুষকে হত্যা করে।’

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারোয়ার, যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, জ্যেষ্ঠ মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও কুমিল্লা অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক নাভিদ নওরোজ শাহ, জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম।

মঞ্চে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন উপস্থিত থাকলেও তাঁরা বক্তব্য দেননি।

এদিকে কুমিল্লায় এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে বুধবার সকাল থেকেই কুমিল্লা নগরে নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়ানো হয়। নগরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সামনে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাফসা জাহানের একটি তোরণ ভাঙচুর করে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।