মেহেরাব হোসেন
মেহেরাব হোসেন

লক্ষ্মীপুর

এইচএসসি পাস করে একাদশে ভর্তি হওয়া মেহেরাবই পেলেন কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদ

মেহেরাব হোসেন ২০১৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন স্নাতকে (সম্মান)। তবে স্নাতক প্রথম বর্ষ পড়ার সময়ই চলে যান বিদেশে। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আবারও দেশে ফিরে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি।

এইচএসসি পাস করেও পুনরায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া সেই মেহেরাব হোসেনকে লক্ষ্মীপুরের কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কলেজ ছাত্রদলের এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কমিটিতে মেহেরাব হোসেনকে আহ্বায়ক ও আজিম হোসেনকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এই কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা ২৪।

‘দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে, জেলা শাখার নেতারা রহস্যজনক কারণে মেহেরাবের ইচ্ছা পূরণ করেছেন। এটি আমাদের হতাশ করেছে। এটি কোনোভাবেই আমরা মেনে নিতে পারছি না’
শাহাদাত হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক, কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রদল

কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়কের পদ পাওয়া মেহেরাব হোসেন ২০১৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন স্নাতকে (সম্মান)। তবে স্নাতক প্রথম বর্ষ পড়ার সময়ই চলে যান বিদেশে। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আবারও দেশে ফিরে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। কলেজ শাখায় সক্রিয় নেতা-কর্মীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, কলেজ ছাত্রদলের সভাপতির পদ পেতে মেহেরাব এইচএসসি পাসের পরও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। ৭ মে প্রথম আলোতে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সদ্যঘোষিত কমিটিতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পেয়েছেন শাহাদাত হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংগঠনের কলেজ শাখার সভাপতির পদ পেতে এইচএসসি পাস করার পরও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন মেহেরাব। দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে, জেলা শাখার নেতারা রহস্যজনক কারণে মেহেরাবের ইচ্ছা পূরণ করেছেন। এটি আমাদের হতাশ করেছে। এটি কোনোভাবেই আমরা মেনে নিতে পারছি না।’

জানতে চাইলে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিম বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক নেতারা যাচাই-বাছাইয়ের পর এই কমিটি গঠন করেছে। দলের দুঃসময়ে মেহরাবরা হাল ধরেছেন। সুসময়ে এসে তাই তাঁকে বাদ দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া এক মাসের জন্য এই আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। এক মাস পর সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করা হবে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ছাত্র ছিলেন মেহেরাব হোসেন। কলেজের নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ২০১৭ সালে তিনি এইচএসসি পাস করে একই কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি ছিলেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলে তাঁর ভর্তি বাতিল হয়। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তিনি আবারও দেশে ফিরে কলেজের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি কলেজের বিএমটিতে (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি) একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন।

কলেজের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, বিএমটি ও এইচএসসি সমমানের। এরপরও এইচএসসি পাস একজন শিক্ষার্থী বিএমটি শাখায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি জেনে তাঁরা হতভম্ব। মেহেরাব হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর আর কল ধরেননি।

গতকাল কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাড়াও লক্ষ্মীপুরে আরও ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন কমিটির অনুমোদন দিয়েছে জেলা ছাত্রদল। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে লক্ষ্মীপুর দারুল উলুম কামিল (আলিয়া) মাদ্রাসা, লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ভবানীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, জনতা ডিগ্রি কলেজ, লক্ষ্মীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজ, জিল্লুর রহিম কলেজ, রায়পুর সরকারি কলেজ, রুস্তম আলী ডিগ্রি কলেজ ও হাজিরহাট সরকারি উপকূল কলেজ। এর মধ্যে রায়পুর সরকারি কলেজ ও কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে।