বাগেরহাটে বিএনপি নেতা ও সাংবাদিক এ এস এম হায়াত উদ্দিনকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। শনিবার দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাব আয়োজিত মানববন্ধনে সংবাদকর্মী ছাড়াও বিএনপির নেতারা একাত্মতা জানিয়ে অংশ নেন।
মানববন্ধনে বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক তরফদার রবিউল ইসলাম, টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হক, সাংবাদিক এস এম রাজ, আহাদ উদ্দিন হায়দার, হেদায়েত হোসেন, ইয়ামিন আলী, কামরুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, একজন সংবাদকর্মীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। অথচ পুলিশ এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার না করলে সংবাদকর্মীরা কঠোর কর্মসূচি দেবেন।
মানববন্ধনে একাত্মতা জানিয়ে অংশ নেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ ফরিদুল ইসলাম, বিএনপি নেতা জাকির হোসেন, খান মনিরুল ইসলাম, মাসুদ রানা, ফকির তারিকুল ইসলাম, শাহেদ আলী, মাহবুবুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তাঁরা বলেন, হায়াত উদ্দিন শুধু সাংবাদিক ছিলেন না; তিনি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী একজন সৈনিক ছিলেন। তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর হত্যাকারী যত শক্তিশালী হোক, তাঁকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের হাড়িখালি এলাকায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হায়াত উদ্দিনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি বাগেরহাট পৌর শহরের উত্তর হাড়িখালি এলাকায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাগেরহাট পৌর বিএনপির সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছিলেন হায়াত উদ্দিন। তবে পরাজিত হন। এর আগে তিনি পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসা, ঠিকাদারি কাজের মান, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন হায়াত উদ্দিন। তবে তাঁর বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। হায়াত উদ্দিনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা আছে। কয়েক মাস আগেও তাঁর ওপর একবার হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে হায়াতের মরদেহ বাগেরহাটে নিয়ে আসা হয়। হাড়িখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে জানাজা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
হায়াত উদ্দিনের স্ত্রী ও দুটি মেয়ে আছে। ছোট মেয়ে মারজিয়া ও বড় মেয়ে হিয়া মনি এখনো বুঝতে পারছে না, তাদের বাবা আর ফিরবেন না। স্ত্রী ফাতেমা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘শুধু সত্য কথা লেখার কারণেই আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।’
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের পুলিশ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছে। তাঁদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত আছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি। তাঁরা এজাহার দিলে মামলা করা হবে।