প্রতিদিনই রাত হলেই গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে লাঠি হাতে পাহারায় বসেন তরুণেরা। উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর এলাকা থেকে তোলা
প্রতিদিনই রাত হলেই গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে লাঠি হাতে পাহারায় বসেন তরুণেরা। উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর এলাকা থেকে তোলা

মিরসরাইয়ে ডাকাত-আতঙ্ক, রাত জেগে এলাকাবাসীর পাহারা  

দিবাগত রাত দেড়টা। হঠাৎ দরজা ভাঙার শব্দে ঘুম ভাঙে সাবেক সেনা সার্জেন্ট আবু সুফিয়ানের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুই ডাকাত ধারালো অস্ত্রের মুখে বেঁধে ফেলেন তাঁকে। এরপর বাড়িতে থাকা নারী ও শিশুদেরও জিম্মি করে মারধর করা হয়। একে একে স্বর্ণালংকার, টাকা ও মুঠোফোন লুট করে নেয় ডাকাত দলের সদস্যরা।

১৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ইউনিয়নের মাছুমের তালুক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এরপর থানায় অভিযোগ করেছিলেন আবু সুফিয়ান। তবে এখন পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি। অবশ্য শুধু ওই দিনই নয়; এ উপজেলায় গত চার মাসে এমন অন্তত নয়টি ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবারই আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ডাকাত দল মধ্যরাতে হানা দিয়েছে। বেশির ভাগ ডাকাতিই হয়েছে প্রবাসীদের বাড়িতে। পরপর এমন ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, গত চার মাসে উপজেলার হিঙ্গুলী, খৈয়াছড়া, মিরসরাই পৌরসভা ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের নয়টি বাড়িতে একই কায়দায় ডাকাতি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর গ্রামেই ডাকাতি হয়েছে চারবার। নয়টির আটটি ডাকাতিই হয়েছে প্রবাসীদের বাড়িতে। এসব ঘটনায় ৪২ ভরি স্বর্ণালংকার, ৩ লাখ টাকা ও ২২টি মুঠোফোন লুট হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

গ্রামে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় এখন নিজ উদ্যোগেই পাহারা দিচ্ছেন উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর এলাকার বাসিন্দারা। প্রতিদিনই রাত হলেই গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে লাঠি হাতে পাহারায় বসেন তরুণেরা। গ্রামটিকে সাত ভাগ করে প্রায় ১৫০ জন মানুষ এতে অংশ নেন। মাঝেমধ্যে পুলিশের টহল দলের সদস্যরাও তরুণদের সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন।

গ্রামে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় এখন নিজ উদ্যোগেই পাহারা দিচ্ছেন উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর এলাকার বাসিন্দারা। প্রতিদিনই রাত হলেই গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে লাঠি হাতে পাহারায় বসেন তরুণেরা। গ্রামটিকে সাত ভাগ করে প্রায় ১৫০ জন মানুষ এতে অংশ নেন। মাঝেমধ্যে পুলিশের টহল দলের সদস্যরাও তরুণদের সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে এ উদ্যোগের সংগঠক স্থানীয় ব্যবসায়ী সাজ্জাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত আগস্ট ও অক্টোবর মাসে আমাদের এলাকায় একে একে চার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। তাই আমরা এক হয়ে এলাকা পাহারা দিচ্ছি। পাহারা শুরু করার পর আর ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি।’

মিরসরাইয়ের দুর্গাপুর ইউনিয়নের হাজিরসরাই গ্রামে গত শুক্রবার রাতে একটি বিয়ে বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে তোলা

মিরসরাই ও জোরারগঞ্জ থানার পুলিশ সূত্র জানায়, গত চার মাসে উপজেলার দুই থানায় নয়টি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও মামলা হয়েছে ছয়টি। এর মধ্যে চারটি ডাকাতির চেষ্টা মামলা। জোরারগঞ্জ থানায় পাঁচটি ডাকাতির ঘটনার বিপরীতে মামলা হয়েছে চারটি। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার ও কিছু ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। আর বাকি একটি মামলা হয়েছে মিরসরাই থানায়। এ মামলায় গতকাল পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তার নেই।

ডাকাত দলটি শহর থেকে এসে ডাকাতির পর সরে পড়ে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আবদুল হালিম, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা,  জোরারগঞ্জ থানা

জানতে চাইলে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাকাত দলটি শহর থেকে এসে ডাকাতির পর সরে পড়ে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে চুরি, ডাকাতি ও মহাসড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাতে টহল বাড়ানোসহ স্থানীয় মানুষকে সচেতন করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা নিরলস চেষ্টা করছি।’

প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির পর জিনিসপত্র এলোমেলো করে রেখে যায় ডাকাতরা। ৬ নভেম্বর মিরসরাইয়ের গোবানিয়া এলাকা থেকে তোলা

মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, ‘এলাকায় চুরি–ডাকাতি নিয়ন্ত্রণে গত এক মাসে ১০৩ জন দুষ্কৃতকারীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত আন্তজেলা ডাকাত দলের একটি চক্র এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। জেলা ডিবি ও র‌্যাবের সহায়তা নিয়ে তাদের গ্রেপ্তারে মাঠে কাজ করছি আমরা।’