গণমিছিল নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা এগোতে চাইলে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি এম এ জলিল একদল পুলিশ নিয়ে মিছিলে বাধা দেন। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফরিদপুর জেলা বিএনপির কার্যালয়ের পাশে
গণমিছিল নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা এগোতে চাইলে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি এম এ জলিল একদল পুলিশ নিয়ে মিছিলে বাধা দেন। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফরিদপুর জেলা বিএনপির কার্যালয়ের পাশে

ফরিদপুরে বিএনপির গণমিছিল নিয়ে যা হলো

ফরিদপুরে পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গণমিছিল বের করে বিএনপি। তবে কয়েক কদম এগোনোর পর পুলিশ আর মিছিলটি এগোতে দেয়নি। পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেন নেতা-কর্মীরা।

বিএনপি নেতা-কর্মীরা জানান, গণমিছিল নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা এগোতে চাইলে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল একদল পুলিশ নিয়ে মিছিলে বাধা দেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয় ওসির। এ সময় নিতাই রায়কে ওসি জলিল বলেন, ‘আর এগোনোর সুযোগ নেই।’ তখন নিতাই রায় ওসিকে বলেন, ‘আমি জানি, আপনারা আমাদের মতো অসহায় এবং শৃঙ্খলিত। আপনাদের করার কিছু নেই।’

এর আগে বেলা ১১টার দিকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে শহরের কাঠপট্টি এলাকা থেকে গণমিছিল শুরু করার কথা ছিল। মিছিলটি কাঠপট্টি এলাকা ঘুরে থানা রোড, জনতা ব্যাংকের মোড় হয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাব পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল। তবে সকাল থেকে কাঠপট্টি এলাকায় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সড়কের দুই পাশের মোড়ে, জনতা ব্যাংকের মোড়, প্রেসক্লাব, ব্রাহ্ম সমাজ সড়ক এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন দেখা যায়।

পুলিশ ও বিএনপির নেতা–কর্মীরা মুখোমুখি

বেলা ১১টার দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়ার সঙ্গে পুলিশের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পুলিশকে উদ্দেশ করে কিবরিয়া বলেন, ‘আপনারা গণমিছিল করতে না দিলে আমরা করব না।’

বেলা ১১টা ৮ মিনিটে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী দলীয় কার্যালয়ে আসেন। ১১টা ২০ মিনিটে স্থানীয় কিছু দলীয় কর্মী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। এর পরপরই সেখানে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো. আবু জাফর। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নায়াব ইউসুফ আসেন। এরপর নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিয়ে থানা রোডের দিকে এগোতে চাইলে বাধা দেয় পুলিশ। ওই সময় শামা ওবায়েদের সঙ্গে কথা হয় ওসি এম এ জলিলের। শামা ওবায়েদ এগিয়ে মোড় পর্যন্ত অগ্রসর হওয়ার প্রস্তাব দিলে তা নাকচ করে দেন ওসি। পরে তাঁরা কার্যালয়–সংলগ্ন সড়কেই সমাবেশ করেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী। পরিচালনা করেন জেলা বিএনপি সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া।

পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে যায় বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচি

সমাবেশে নিতায় রায় চৌধুরী বলেন, বাধা দিয়ে গণমানুষের অধিকার দমিয়ে রাখা যায় না। জোর করে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। টিকে থাকতে পারেনি চেঙ্গিস খান, হালাকু খান, আইয়ুব খান। টিকতে পারেনি ব্রিটিশ। এই সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে।

শামা ওবায়েদ বলেন, গণমিছিল পণ্ড করার জন্য গত রাতে ফরিদপুরে বিএনপির ১০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি করেছে পুলিশ। আওয়ামী লীগ ভয় পেয়ে গেছে কেন? ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য ২৭ দফা আদায়ের জন্য জনগণ মাঠে নেমে এলে সরকার টিকতে পারবে না।

শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ আজ পুলিশি রাজত্বে পরিণত হয়েছে। পুলিশ চলে জনগণের টাকায়। সেই পুলিশকে এই গণবিরোধী সরকার দেশের জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে, পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আমাদের অধিকার হরণ করছে। গতকাল বিনা উসকানিতে গ্রেপ্তার করেছে আমাদের নেতা-কর্মীদের।’

বিএনপির গণমিছিলের প্রস্তুতির সময়

এদিকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের কাঠপট্টি এলাকায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ের নিচ থেকে ছয় নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন জেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব মুরাদ হোসেন (৪৫), জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি সোহেব শেখ (৩৭), জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য ফারুক হোসেন (৩৬), ফরিদপুর সদরের আলীয়াবাদ ইউনিয়ন বিএনপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি বাদশা মিয়া (৪৩), বিএনপি কর্মী হাশেম খান (৫৪) ও শের আলম (৫০)।

ওসি এম এ জলিল বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আগের দায়ের করা এক মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।