
কর্ণফুলী টানেল চালুর পর বদলে গেছে চট্টগ্রামের আনোয়ারার বৈরাগ এলাকার দৃশ্যপট। ‘চায়না রোড’ ঘিরে সন্ধ্যার পর জমে ওঠে আড্ডা, খাবারের দোকান, সেলফি তুলতে আর ঘুরতে আসা মানুষের ভিড়।
কয়েক বছর আগেও জায়গাটি ছিল নীরব। মানুষজন চলাচল করত না বললেই চলে। তবে এখন চিত্র ভিন্ন। জায়গাটিতে হয়েছে চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চলের সমান্তরাল চার সড়ক। পুরো এলাকাটিই এখন সব সময় থাকে সরগরম। মানুষজনও একে চেনেন ‘চায়না রোড’ নামে।
কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়কের গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা সড়কের চিত্র এটি। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে কর্ণফুলী টানেল পার হয়ে আধা কিলোমিটার গেলেই আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ এলাকায় এ সড়কের অবস্থান। এটি এখন আনোয়ারার অন্যতম ব্যস্ত জায়গা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বদলে যায় এ এলাকার আবহ। শহর থেকে টানেল দেখতে আসা লোকজনের ভিড়, পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা মানুষ, বাইকারদের গ্রুপ—সব মিলিয়ে পুরো এলাকা হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। তাঁদের কেউ গড়ে ওঠা দোকানে বসে নাশতা করেন, কেউ গল্প করেন, আবার কেউ ঝলমলে এ সড়কের ছবি তুলে ব্যস্ত সময় পার করেন।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধনের পর থেকে আশপাশের এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। টানেল পার হয়ে অনেকেই এখন বৈরাগে কিছুক্ষণের জন্য হলেও থামছেন। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এ এলাকায় ভিড় ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। মানুষজনের এ সমাগম চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
‘বিকেল থেকে প্রচুর মানুষ এখানে আসেন। দৈনিক চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি হয়। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আরও বেশি বিক্রি হয়। এ বেচাবিক্রি চলে রাত ১২টা পর্যন্ত।’ফুচকা বিক্রেতা মোহাম্মদ আইয়ুব
মানুষের ভিড়ের কারণে দ্রুতই গড়ে উঠেছে নানা রকম রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান। পেঁয়াজু, ফুচকা, চটপটি, চিকেন সমুচা, রোল, চা-কফি, আচার থেকে শুরু করে বিরিয়ানি, চায়নিজ খাবার, ভারতীয় বাহারি সব পদের খাবার পাওয়া যাচ্ছে এখানে। এর ফলে ভোজনরসিকেরাও এ এলাকায় নিয়মিত আসছেন।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ‘চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রশস্ত সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে রেখেছেন দোকানিরা। গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়া দর্শনার্থীরা সেখানে বসে চা-নাশতা খেতে খেতে গল্প করছেন। অনেকেই টানেলের আলো পেছনে রেখে ছবি তুলছেন। সড়কের ওপর দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে ছুটে চলছে ছোট-বড় যানবাহন।
জায়গাটিতে ঘুরতে আসা সৌদি আরবপ্রবাসী রিজওয়ান সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছুটিতে বাড়িতে এসেছি। এরপর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে টানেল সড়ক দেখতে এসেছি। সড়কের পাশে খাবারের দোকান থাকায় থেমেছি। আশপাশের ছবিও তুলছি। সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর লাগছে।’
সীতাকুণ্ড থেকে ঘুরতে আসা সাইফুল আলম বলেন, ‘টানেল পার হয়ে ফিরে যাওয়ার সময় দেখি শত শত মানুষ নাশতা করছে, আড্ডা দিচ্ছে। এ কারণে আমরাও গাড়ি থেকে নেমেছি। কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে, নাশতা করে আবার ফিরে যাব।’
টানেলের এ সড়ক ঘিরে হাসিমুখ স্থানীয় দোকানিদেরও। সড়কের পাশে ফুডকোর্ট দিয়ে ফুচকা বিক্রি করা মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, ‘বিকেল থেকে প্রচুর মানুষ এখানে আসেন। দৈনিক চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি হয়। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আরও বেশি বিক্রি হয়। এ বেচাবিক্রি চলে রাত ১২টা পর্যন্ত।’
একই রকম তথ্য জানালেন জাহেদ মনি, মো. ইয়াসিন, মো. লোকমান, মো. শফিকুর রহমান ও মোহাম্মদ কায়সার। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, টানেল চালুর পর থেকে পুরো এলাকা জমে উঠেছে। মানুষের ভিড় বাড়তে থাকায় তাঁরা বিভিন্ন খাবারের দোকান দিয়েছেন। দিন দিন তাঁদের বিক্রি বাড়ছে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আকতার বলেন, টানেল সংযোগ সড়কে দর্শনার্থী বাড়তে থাকায় স্থানীয়ভাবে খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে। দর্শনার্থী ও দোকানির সুবিধার জন্য শেডসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।