চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিতে অনেকে শাটল ট্রেন চলাচল করেন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিতে অনেকে শাটল ট্রেন চলাচল করেন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্যতা শিথিলের পরও কমেছে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন, এবার কত

আবেদনের যোগ্যতা শিথিল করা হয়েছে। তবু গত দুই বছরের তুলনায় এবার কম আবেদন জমা পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায়। গত বুধবার দিবাগত রাতে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদনপ্রক্রিয়া শেষ হয়।

এবার ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন জমা পড়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৫৮৯ জনের। এর মধ্যে আবেদন ফি জমা দিয়েছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৫ শিক্ষার্থী। তাঁরাই মূলত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

গত বছর ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করেন ২ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৯ জন। এর আগের বছর ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে আবেদন করেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৬৯ শিক্ষার্থী। সেই হিসাবে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় গতবারের তুলনায় ২৬ হাজার ১৫০ জন, আর আগের বছরের তুলনায় ৯ হাজার ৮০টি আবেদন কম পড়েছে। গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা কমানোর পরও এ ঘটনা ঘটল।

এ বছর এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। এ কারণে আবেদন কম হয়েছে। পাশাপাশি এখন দেশের প্রতিটি বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ফলে কষ্ট করে কেউ অন্য বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চান না।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ

এ বছর চারটি ইউনিট ও তিনটি উপ–ইউনিট মিলিয়ে ৩ হাজার ৫৯৭টি সাধারণ আসনের বিপরীতে পরীক্ষা হচ্ছে। এর বাইরে ৫৬৮ আসন কোটা হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে। এবার শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা থাকছে না। সেই সঙ্গে এ বছর ভর্তি পরীক্ষার ফলের সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের জিপিএ যুক্ত হবে না।

ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন। তিনি বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, প্রকৌশল আর মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদভুক্ত এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ বছরও সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে এ ইউনিটে।

যোগ্যতা শিথিল

এবারের ভর্তি পরীক্ষায় এ ইউনিটে আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক (চতুর্থ বিষয়সহ) মিলিয়ে মোট জিপিএ-৮ নির্ধারণ করা হয়। গত বছর ছিল ৮ দশমিক ৫। এই ইউনিটে আবেদন করতে আলাদাভাবে মাধ্যমিকে ন্যূনতম জিপিএ-৪ ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৩ নির্ধারণ করা হয়। গত বছর ছিল দুটিতে ন্যূনতম জিপিএ-৩ দশমিক ৫ করে।

কলা ও মানববিদ্যা অনুষদভুক্ত বি ইউনিটে আবেদনের জন্য মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে চতুর্থ বিষয়সহ ন্যূনতম মোট জিপিএ নির্ধারণ করা হয় ৬ দশমিক ৫। গত বছর দুটি মিলিয়ে ছিল ৭। এই ইউনিটে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম জিপিএ এ বছর ৭ আর গত বছর ৭ দশমিক ৫ নির্ধারিত ছিল।

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত সি ইউনিটে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের আবেদনের ন্যূনতম জিপিএ এবার নির্ধারণ করা হয় এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে ৭। গত বছর ছিল ৭ দশমিক ৫। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও ব্যবসায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম জিপিএ এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে ৭ দশমিক ৫ নির্ধারণ করা হয়। এটি গত বছর ছিল ৮। ডি ইউনিটে এ বছর ন্যূনতম মোট জিপিএ ৭ দশমিক ৫ নির্ধারণ করা হলেও এর আগের বছর ছিল ৮।

যোগ্যতা শিথিলের পরও আবেদন কম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। এ কারণে আবেদন কম হয়েছে। পাশাপাশি এখন দেশের প্রতিটি বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ফলে কষ্ট করে কেউ অন্য বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চান না। একই কথা বলেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন হলেন অধ্যাপক মো. ইকবাল শাহীন খান।

ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা দুই শিক্ষার্থী

কোন ইউনিটে, কোন অনুষদ, আবেদন কত

এ ইউনিটের অধীন রয়েছে চারটি অনুষদ। এগুলো হলো বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদ। চার অনুষদে মোট সাধারণ আসন ১ হাজার ৯৩টি। এই ইউনিটে মোট আবেদন করেছেন ৮৭ হাজার ৬৯৬ শিক্ষার্থী।

কলা ও মানববিদ্যা অনুষদভুক্ত বি ইউনিটে (নাট্যকলা, চারুকলা, আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, পালি ও সংগীত বিভাগ ছাড়া) মোট সাধারণ ৬৯০টি। এই ইউনিটে আবেদন করেছেন ৬৯ হাজার ২৮৯ শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত সি ইউনিটে বিভাগ রয়েছে ছয়টি। এতে সাধারণ আসন ৫১০টি। এই ইউনিটে মোট আবেদন করেছেন ১৬ হাজার ৯২৫ শিক্ষার্থী। ডি ইউনিটে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৯টি বিভাগ, আইন অনুষদের আইন বিভাগ, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগ ও জীববিজ্ঞান অনুষদের দুটি বিভাগ রয়েছে। এতে আসন রয়েছে ৮৪৯টি। এই ইউনিটে আবেদন জমা পড়েছে ৫১ হাজার ৫১০টি।

এ ছাড়া শিক্ষা অনুষদভুক্ত শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে গঠিত ডি-১ উপ–ইউনিটে আসন রয়েছে ৪০টি। এতে আবেদন করেছেন ১ হাজার ৪২১ শিক্ষার্থী। নাট্যকলা, সংগীত ও চারুকলা বিভাগ নিয়ে গঠিত বি-১ উপ–ইউনিটে আসন রয়েছে ১৩৫টি। এই উপ–ইউনিটে আবেদন করেছেন ১ হাজার ৬৪৫ শিক্ষার্থী। আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ ও পালি বিভাগ নিয়ে গঠিত বি-২ উপ–ইউনিটে আসন রয়েছে ২৮০টি। এই উপ–ইউনিটে আবেদন করেছেন ৪ হাজার ৮৪৯ শিক্ষার্থী।

পরীক্ষার মানবণ্টন

সব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা মোট ১০০ নম্বরের। এর মধ্যে বহুনির্বাচনী পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা। এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর ভিত্তিতে ২০ নম্বর যুক্ত হবে না। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা যাবে। ডি-১ উপ–ইউনিট বাদে সব ইউনিটেই পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর হবে ৪০। ডি-১ উপ–ইউনিট পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর হবে ৩৫।

এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজিতে ২৫, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত ও জীববিদ্যা প্রতিটিই ২৫ নম্বর করে (শিক্ষার্থীদের যেকোনো তিনটি বিষয়ে উত্তর দিতে হবে) থাকবে। বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা বা ঐচ্ছিক ইংরেজিতে ৩০, ইংরেজিতে ৩০, সাধারণ জ্ঞানে ৪০ নম্বর থাকবে। পাস করতে হলে আলাদাভাবে বাংলায় ন্যূনতম ৭, ইংরেজিতে ৬ ও সাধারণ জ্ঞানে ১৩ নম্বর পেতে হবে।

বি-১ উপ–ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা বা ঐচ্ছিক ইংরেজিতে ২৫, ইংরেজিতে ২৫, সাধারণ জ্ঞানে ৫০ নম্বর থাকবে। এ ছাড়া আলাদাভাবে বাংলায় ন্যূনতম ৫, ইংরেজিতে ৬ আর সাধারণ জ্ঞানে ১৭ নম্বর পেতে হবে। বি-২ ইউনিটে বাংলা বা ঐচ্ছিক ইংরেজিতে ২০, ইংরেজিতে ২০, আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, বুড্ডিস্ট স্টাডিজ ও পালি এবং সাধারণ জ্ঞানে (যেকোনো দুটি বিষয় উত্তর দিতে হবে) ৬০ নম্বর থাকবে। এ ছাড়া আলাদাভাবে বাংলায় ন্যূনতম ৫, ইংরেজিতে ৫, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজে, বুড্ডিস্ট স্টাডিজ ও পালি ১২ আর সাধারণ জ্ঞানে ৯ নম্বর পেতে হবে।

সি ইউনিটে ইংরেজিতে ৪০, বিশ্লেষণ দক্ষতায় ৩০ ও সমস্যা সমাধান অংশে ৩০ নম্বর থাকবে। এ ছাড়া আলাদাভাবে ইংরেজিতে ১৩, বিশ্লেষণ দক্ষতা ও সমস্যা সমাধান অংশে ১০ নম্বর পেতে হবে। ডি ইউনিটে বাংলা বা ঐচ্ছিক ইংরেজিতে ৩০, ইংরেজিতে ৩০, বিশ্লেষণ দক্ষতায় ২০, সাধারণ জ্ঞান, গণিত বা অর্থনীতিতে ২০ নম্বর থাকবে। ডি-১ উপ–ইউনিটে বাংলা বা ঐচ্ছিক ইংরেজিতে ৩০, ইংরেজিতে ৩০, সাধারণ জ্ঞানে ২৫, গেমস ও স্পোর্টসের নীতিমালায় ১৫ নম্বর থাকবে।

পরীক্ষার সূচি

আগামী ২ জানুয়ারি এ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। এ ছাড়া ৩ জানুয়ারি ডি ইউনিট, ৯ জানুয়ারি সি ইউনিট ও ১০ জানুয়ারি বি ইউনিটের পরীক্ষা হবে। অন্যদিকে ৫ জানুয়ারি ডি-১, ৭ জানুয়ারি বি-১ ও ৮ জানুয়ারি বি-২ উপ–ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।