
কক্সবাজারে রামুর চৌমুহনীর নাহার ফিলিং স্টেশনে ওজনে জ্বালানি তেল কম দেওয়ার অভিযোগে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন। পরে এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ফিলিং স্টেশনকে মাত্র ২০ হাজার জরিমানা করেন তিনি। এ বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) কার্যালয়ে এক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
ঘুষের নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইমরান হোসাইনের মুঠোফোনে একাধিবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে রামুর চৌমুহনীতে নাহার ফিলিং স্টেশনে অভিযান পরিচালনা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় ওজনে জ্বালানি তেল কম দেওয়ার অভিযোগে ফিলিং স্টেশনকে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ইমরান হোসাইন। একই অপরাধে ফিলিং স্টেশনটি সিলগালা করে দেন তিনি। স্টেশন কর্তৃপক্ষ এত টাকা জরিমানা দিতে রাজি না হওয়ায় মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করা হয়। একপর্যায়ে রিদুয়ান নামের এক দালাল ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপককে ঘুষের বিনিময়ে জরিমানার টাকা কমানোর প্রস্তাব দেন। এরপর এক লাখ টাকা নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এর আগে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানার স্থলে ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষকে ২০ হাজার টাকা জরিমানার স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার পর ফিলিং স্টেশনের মালিক এজাজুল ওমর চৌধুরী বিষয়টি কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহেরকে জানান। আবু তাহের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইমরান উত্তেজিত হয়ে নিজেকে সৎ কর্মকর্তা বলে দাবি করেন। এরপর আবু তাহের ঘটনাটি জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদকে জানান। ফিলিং স্টেশনের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।
পরে জেলা প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ানকে ওই অভিযোগ তদন্ত করার দায়িত্ব দেন। এরপর বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এডিএম কার্যালয়ে বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে প্রথমে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করেন ইমরান হোসাইন। পরে তথ্য–প্রমাণ উপস্থাপন করায় রিদুয়ান এক লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের কথা স্বীকার করেন। রিদুয়ান বলেন, ঘুষের এক লাখ টাকা থেকে তিনি ১০ হাজার ও বাকি ৯০ হাজার টাকা নিয়েছেন সহকারী পরিচালক ইমরান। সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের বাইরে সাংবাদিক আবু তাহেরের হাতে এক লাখ টাকা তুলে দেন ইমরান।
নাহার ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. আবদুল্লাহ বলেন, ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে সালিস বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ঘুষের এক লাখ টাকা ফেরত দেন ইমরান হোসাইন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান বলেন, ঘুষ গ্রহণের দায়ে রিদুয়ানের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নিয়মিত মামলা করা হচ্ছে এবং ইমরান হোসাইনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।