খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১-২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আজ রোববার ক্লাসে ফিরেছেন
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১-২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আজ রোববার ক্লাসে ফিরেছেন

কুয়েটে শিক্ষকবিহীন শ্রেণিকক্ষে ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা, ৫ মাসেও সংকট কাটেনি

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সংঘর্ষের পাঁচ মাস পার হলেও অচলাবস্থা কাটেনি। উপাচার্য না থাকায় সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী সেশনজট নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।

তবে আগের ঘোষণার ভিত্তিতে ২১-২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আজ রোববার ক্লাসে ফিরেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘রক্তাক্ত কুয়েট’ নামে একটি পেজে শনিবার এক পোস্টে বলা হয়, ‘সকল জরা-জীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে নেতিবাচকতাকে রেড কার্ড দেখিয়ে আমরা সবাই আগামীকাল ক্লাসে ফিরি। শিক্ষকেরা আমাদের মঙ্গল কামনা করেছেন, তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন না। তাই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে ক্লাসে ফেরার সময় এসেছে।’

এদিকে ক্লাস চালুর দাবিতে গার্ডিয়ান ফোরাম ঢাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অভিভাবকদের মানববন্ধন করার কথা রয়েছে।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল (ইইই) বিভাগের ৩১৫ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়,  ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত আছেন। তবে শ্রেণিকক্ষে কোনো শিক্ষক নেই।

২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের একজন আশির মুনতাকিম ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের সময় অনেক শিক্ষক মনোক্ষুণ্ন হয়েছিলেন। আমরা শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। এখন আমরা অনেকটা বাধ্য হয়ে ক্লাসে এসেছি। আমাদের শিক্ষাজীবন থেকে পাঁচটা মাস চলে গেছে। সাবেক ভিসিকে অব্যাহতি দেওয়ার আগে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত ছিল ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হবে। পরে আর কোনো সিন্ডিকেটে নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি যে ক্লাস বন্ধ থাকবে। সে অনুয়াযী আমাদের শিক্ষকদের আইনি কোনো বাধা নেই। তাঁরা কেন ক্লাসে আসছেন না, তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। আমরা স্যারদের বলছি, আমরা ক্লাসে আসছি, আপনারা সদয় হলে ক্লাস শুরু করেন।’

ক্লাসে থাকা অন্য একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা ২১ ও ২২ ব্যাচের প্রায় সবাই উপস্থিত। এই দুই ব্যাচের শুধু ক্লাস, অন্য ব্যাচদের পরীক্ষা। ক্লাস শুরু হলে পরীক্ষা শুরু হবে। আমাদের কয়েকজন নিরাপত্তার কারণে ক্যাম্পাসে এখনো আসেননি।’
এ বিষয়ে কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের অভিভাবক ভিসি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। ভিসি এলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ। ক্লাস তো নেওয়া যায়; কিন্তু এটার পর বিশৃঙ্খলা হলে কে সামলাবে। একজন যদি ক্লাস নেন, বাকিরা ক্লাস নেবেন কি না, সেটা কে বলবে? একজন অভিভাবক থাকলে শৃঙ্খলার মধ্যে সবকিছু হয়।’

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরবর্তী আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ও সহউপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে ২২ মে তিনি পদত্যাগ করেন।

১০ জুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া অগ্রসর হয়নি। নতুন উপাচার্য নিয়োগ হওয়া পর্যন্ত কুয়েটের বেতন-ভাতা কার্যক্রম চালাতে ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমানকে ১৫ জুলাই থেকে সাময়িক আর্থিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক সমিতি বলে আসছে, সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার না হলে তাঁরা ক্লাসে ফিরবেন না। ১৬ জুলাই সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়ও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

কুয়েট–১৯ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘২০২০ সালের জানুয়ারিতে ভর্তি হয়ে দেড় বছরের সেশনজট পোহাতে হয়েছে। আবারও একই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাঁচ মাস পার হয়ে গেল, এখনো ক্লাসে ফিরতে পারিনি। শিক্ষার্থী ও পরিবারের ওপর মানসিক চাপ যাচ্ছে।’