কুমিল্লা নগরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান অনিক হাসান। গতকাল বৃহস্পতিবার তোলা
কুমিল্লা নগরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান অনিক হাসান। গতকাল বৃহস্পতিবার তোলা

অটোরিকশায় পড়ে ছিল ১৫ লাখ টাকা, যাত্রীকে খুঁজে ফেরত দিলেন চালক

ব্যাটারিচালিত রিকশার (মিশুক) চালক অনিক হাসান। প্রতিদিনের মতো অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন। এক যাত্রী তাঁর রিকশায় একটি ব্যাগ ফেলে গিয়েছিলেন। অনিক ওই ব্যাগ খুলে দেখেন তাতে ১৫ লাখ টাকা আছে। পরে অনিক ওই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে টাকা ফেরত দেন।

কুমিল্লা নগরের বজ্রপুর এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। অনিকের সততার দৃষ্টান্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই তাঁর সততার প্রশংসা করেছেন।

অনিক হাসানের (২৫) বাড়ি কুমিল্লা নগরের চৌধুরীপাড়া এলাকায়। তাঁদের অভাবের সংসার। তাঁর বাবাও অটোরিকশা চালান। গতকাল সকালে তাঁর অটোরিকশায় উঠেছিলেন মরণ সূত্রধর নামের এক ব্যক্তি। তিনি তাঁর মেয়েকে নিয়ে নগরের বজ্রপুর এলাকার একটি কিন্ডারগার্টেনে দিয়েছিলেন। তিনি ভুল করে ওই টাকার ব্যাগ ফেলে গিয়েছিলেন।

গতকালের ঘটনা সম্পর্কে অনিক বলেন, গতকাল সকাল আটটার দিকে ওই যাত্রীকে (মরণ সূত্রধর) নামিয়ে দিয়ে রাজগঞ্জ এলাকায় একটি চা দোকানে বসেন। হঠাৎ চোখ পড়ে গাড়ির সিটের দিকে; নীল রঙের একটি পলিথিন ব্যাগ পড়ে ছিল। ব্যাগটি খুলে দেখেন অনেক টাকা। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সঙ্গে সঙ্গে বাবার মুঠোফোনে কল দেন। তখন তাঁর বাবা বলেন, যাঁর টাকা তাঁকে খুঁজে বের করে ফেরত দিয়ে আসতে।

অনিক জানান, বাবার কথা শুনে তিনি আবারও অটোরিকশা নিয়ে বজ্রপুর সেই বিদ্যালয়ের সামনে যান, কিন্তু সেখানে সেই যাত্রী ছিলেন না। পরে আরও কয়েকবার ওই জায়গায় যান। সকাল পৌনে ৯টার দিকে টাকার মালিককে খুঁজে পান।

টাকার মালিক মরণ সূত্রধর নগরের ছাতিপট্টি এলাকার একজন সোনা ব্যবসায়ী। গতকাল রাতে তিনি বলেন, ‘আজ (গতকাল) সকালে বাসা থেকে টাকাগুলো নিয়ে বের হই। মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে টাকা নিয়ে দোকানে যাব, কিন্তু ভুল করে টাকার ব্যাগটি অটোরিকশাতে ফেলেই চলে যাই। ফিরে এসে দেখি অটোরিকশাটি নেই। ভেবেছিলাম টাকা আর পাব না। নগরের বেশির ভাগ অটোরিকশার চালক বিভিন্ন জেলা থেকে আসা। কিন্তু চালক অনিকের সততার কারণে টাকা ফেরত পেলাম। তাঁর জন্য অনেক আশীর্বাদ করছি সৃষ্টিকর্তার কাছে। অনিক যা করেছে, তা আজকালকার দিনে কল্পনাই করা যায় না। আমি ওর কাছে চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব।’

টাকাগুলো ফিরিয়ে দিয়ে আত্মতৃপ্ত বলে জানান অনিক হাসান। তিনি বলেন, ‘ব্যাগে এতগুলো টাকা দেখে আমি প্রথমেই আমার বাবাকে কল দেই। বাবা একবাক্যে বলেন, যার জিনিস, তাকে খুঁজে দিয়ে আয়। অন্যের টাকা নিয়ে বাঁচতে চাই না। আমি এরপর কয়েকবার ঘুরে ওই এলাকায় এসে শেষমেশ ব্যাগের মালিককে খুঁজে পাই। যার টাকা তাকে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি শান্তি পেয়েছি। ভাবিনি ঘটনাটি এভাবে ভাইরাল হয়ে যাবে। আমার পরিবার সব সময় আমাকে সততার শিক্ষা দিয়েছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, আবার টাকার জন্যই ভাই-বন্ধুর সম্পর্ক ভেঙে যেতে সময় লাগে না। অথচ সেই টাকা উপেক্ষা করে এক তরুণ অটোচালক ফিরিয়ে দিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। অনিক হাসানের এ ঘটনা সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।