
পৈতৃক সম্পত্তি আত্মসাৎ এবং নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ফরিদপুরে পাঁচ ভাইয়ের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দুই বোন। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের মরহুম সাংবাদিক শামসুদ্দীন মোল্লা মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
মধুখালী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে নদীয়া বাজারকান্দি এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত ইদ্রিস আলী ও নূরজাহান বেগমের পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলে। তাঁদের পাঁচ মেয়ে সেলিনা আক্তার (৬০), বেলি আক্তার (৫৫), শিউলী আক্তার (৫১), শিমু আক্তার (৪৫) ও রিমু সুলতানা (৪০) সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাঁদের দুই ভাই হলেন মধুখালী পৌর কৃষক দলের আহ্বায়ক নূর নবী খান (৫৩) ও উপজেলা যুবলীগের কর্মী মো. কামরুজ্জামান (৫০)।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঁচ বোন জানান, মা–বাবার রেখে যাওয়া সব সম্পতি দুই ভাই জোরপূর্বকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভোগ দখল করছে। পাঁচ বোনকে বাড়ির সীমানায় যেতে দেয় না। এমনকি বাবার কবর জিয়ারত করার জন্য গেলেও বোনদের গালিগালাজের পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
পাঁচবোনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘গত ৮ ডিসেম্বর আমাদের মা মারা যান। আমরা মাকে দেখতে ছুটে যাই। কিন্তু আমার ভাই মধুখালী পৌর কৃষক দলের আহ্বায়ক নুর নবী বিএনপির ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁর পালিত দলীয় গুন্ডা বাহিনী দিয়ে আমাদের দিবাগত রাত তিনটার সময় ঘর থেকে বের করে দেয়। ৮ মে বাবার সম্পত্তি থেকে আমাদের পাওনা অংশের মধ্যে কিছু অংশ বিক্রি করতে বায়নাসহ দলিল করি, তখন নূর নবীর দলীয় ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সম্পাদন করা দলিলটি তার লোক দ্বারা আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ বিষয়ে মধুখালীতে একাধিকবার সালিস হয়েছে। ঘটনাটি মধুখালী থানা–পুলিশও জানে। তাঁরা বর্তমানে ভয়ে ভীতির মধ্যে জীবন যাপন করছেন। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি যেন আইন মোতাবেক পেতে পারেন, সে জন্য তাঁরা সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
পাঁচ বোনের একজন রিমু সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা ৮ একর ৪০ শতাংশ জমি রেখে গেছেন। এর মধ্যে তাঁদের পাঁচ বোনকে দুই একর চার শতাংশ জমি দেওয়া হয়েছে। কাগজে–কলমে এ জমি দেওয়া হলেও দুই ভাইয়ের দাপটের কারণে তা ভোগদখল করতে পারছেন না কিংবা বিক্রিও করা যাচ্ছে না।
বোনদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নূর নবী খান বলেন, ‘অনেক ছোট বয়সে আমাদের বাবা মারা গেছেন। আমি বাসে চাকরি করে, মালয়েশিয়া গিয়ে বোনদের লেখাপড়া করিয়েছি। বোনদের বিয়ের সময় জমি বিক্রি করতে হয়েছে, তা–ও ওদের সুখী রাখতে পিছপা হইনি। জীবনে ওদের জন্য কীই–না করেছি। বাবার সম্পত্তি ওরা পাবে, এটা অস্বীকার করছি না। ওদের যদি মানবতাবোধ না থাকে তাহলে সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। এ জন্য তো বসতে হবে। আমি তো কখন বলিনি, জমি দেব না, পারলে নিস। কিন্তু ওরা তো এখন কোনো আলোচনায় বসতে চায় না।’
আরেক ভাই মো. কামরুজ্জামান নিজেকে যুবলীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমার বোনদের সঙ্গে যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, তা কোনো সমস্যাই না। আসলে একসঙ্গে বসলেই এই সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব। কিন্তু তাঁরা বসতে চাচ্ছেন না। আমাদের সঙ্গে না বসে ভগ্নিপতিদের পাল্লায় পড়ে নানা জায়গায় অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। বোনরা আইন অনুযায়ী যে সম্পত্তি পাওয়ার তা তো পাবেই, সেটা দিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আবারও অনেক সময় বোনেরা সেক্রিফাইজও করে। অবশ্য সবটাই নির্ভর করছে আলোচনার ওপর। আমার বোনদের কোনো অত্যাচার বা নির্যাতনের করা হয়নি। এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’