
বরিশালের কৃতী সন্তান, অবিভক্ত ভারত ও পরবর্তী পাকিস্তানের বহুত্ববাদী রাজনীতিবিদ মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের ১২২তম জন্মদিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, যোগেন মণ্ডল প্রয়াত হয়েছেন, কিন্তু এখনো তিনি প্রাসঙ্গিক। তাঁর আন্দোলন-সংগ্রাম এখনো অনুপ্রেরণা জোগায়। যোগেন মণ্ডল ছিলেন বহুজনবাদী রাজনীতির নির্লোভ এক রাজনীতিক, যিনি বর্ণবাদহীন, অসাম্প্রদায়িক এক সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর সেই নির্মোহ রাজনৈতিক সংগ্রাম আজও এ দেশের আকাঙ্ক্ষা, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ক্ষেত্রে পথ দেখায়।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার শ্রীমতী মাতৃমঙ্গল বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে গত বৃহস্পতিবার রাতে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল-১ (আগৈলঝাড়া-গৌরনদী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন। মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল স্মৃতি রক্ষা পরিষদ আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি যতীন্দ্রনাথ মিস্ত্রী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, মহাপ্রাণ যোগেন মণ্ডল ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্মীয় পরিচয়-নির্বিশেষে নিপীড়িত বর্গের মানুষের ঐক্যের গুরুত্বপূর্ণ এক স্বপ্নদ্রষ্টা। সারা জীবন তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক সর্বজনবাদী এক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন দেখতেন এবং সে জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি ছিলেন অবিভক্ত ভারতবর্ষের এমন এক নেতা, যিনি শুধু রাজনৈতিক নেতার পরিচয়ে সীমাবদ্ধ থাকেননি। আমৃত্যু তিনি নির্যাতিত-নিপীড়িত, শোষিত-অনুন্নত, শিক্ষাদীক্ষায় পশ্চাৎপদ, সামাজিকভাবে অবহেলিত, দরিদ্র-অর্থক্লিষ্ট ও রাজনৈতিক অধিকারবঞ্চিত মানুষের সার্বিক উন্নয়ন এবং অধিকার আদায়ের জন্য নিজের ক্ষমতা পরিত্যাগ করতেও দ্বিধা করেননি। এ জন্য তাঁর মৃত্যুর পর ভারত সরকার তাঁকে ‘মহাপ্রাণ’ খেতাব দিয়েছিল।
যোগেন মণ্ডলের রাজনৈতিক জীবনের ওপর আলোকপাত করে জহির উদ্দিন বলেন, যোগেন মণ্ডল রাজনীতির সূচনা ঘটিয়েছিলেন কথিত মূলধারার শহুরে রাজনীতির তৎকালীন ছকটি পাল্টে দিয়ে। তিনি নিম্নবর্ণের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন নির্মোহভাবে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘যোগেন মণ্ডল ছিলেন ক্ষণজন্মা এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি ১৯০৪ সালে বরিশাল থেকে যে সংগ্রামী জীবনের শুরু করেছিলেন, তার যবনিকা হয় মাত্র ৬৪ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে। কিন্তু এখনো তাঁর সংগ্রাম এবং বহুজনবাদী রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা শেষ হয়নি। আমাদের একটি স্থিতিশীল, মানবিক, সবার জন্য সমান সুযোগ সুনিশ্চিত করা রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য সেই সংগ্রাম আজও আমাদের পথনির্দেশ করে।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক মহাপরিচালক সচিন্দ্রনাথ হালদার, আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শিকদার হাফিজুর রহমান, সদস্যসচিব মোল্লা বশির আহম্মেদ পান্না, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল স্মৃতি রক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীনেশ চন্দ্র হালদার, সহসভাপতি অমূল্য রতন বাড়ৈ, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদার, বনানী বিশ্বাস প্রমুখ।