
নারায়ণগঞ্জে আদালতে মামলার হাজিরা দিতে এসে একটি মামলার বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা হামলার শিকার হয়েছেন। বাদীর অভিযোগ, বিবাদীপক্ষের আইনজীবী নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খানের নির্দেশে তাঁর (সাখাওয়াত) অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন। এতে তাঁর স্ত্রী, পাঁচ বছরের শিশুসন্তানসহ পরিবারের চার সদস্য আহত হয়েছেন।
আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন নারায়ণগঞ্জের স্যানিটারি পণ্যের ব্যবসায়ী ও মামলার বাদী মো. ইরফান মিয়া (৫০), তাঁর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা এবং তাঁদের ছেলে মো. জিদান (১৮) ও আবদুল্লাহ (৫)। তাঁরা নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ ঘটনায় ইরফানের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা ফতুল্লা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে সাখাওয়াত হোসেন ছাড়াও তাঁর ল ফার্মের জুনিয়র আইনজীবী খোরশেদ আলম, আল-আমিন এবং সহকারী (মুহুরি) হিরণ বাদশাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ইরফান মিয়া ব্যবসায়িক কারণে ইসমাইল নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে ২৫ লাখ টাকা পান। গত এক বছরেও ইসমাইল টাকা পরিশোধ করেননি। উল্টো টাকা চাইতে গেলে নানাভাবে হুমকি–ধমকি দিচ্ছেন। এ ঘটনায় কয়েক মাস আগে ইরফান নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেন খান ইসমাইলের পক্ষের আইনজীবী।
এজাহারে আরও বলা হয়, মামলার হাজিরার তারিখ থাকায় বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আজ নারায়ণগঞ্জ আদালতে আসেন। আদালত প্রাঙ্গণে বাদীপক্ষের লোকজনকে দেখতে পেয়ে সাখাওয়াত হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি বাদীকে আদালত থেকে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে তর্ক হলে সাখাওয়াত হোসেন খানের নির্দেশে তাঁর অনুসারী আইনজীবী ও সহকারী মিলে ইরফান মিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালান।
আদালত প্রাঙ্গণে মামলার বাদীপক্ষকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ইরফান মিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মারধর করা কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে সাখাওয়াত হোসেনের ঘনিষ্ঠ অনুসারী খোরশেদ আলম, আল-আমিন এবং মুহুরি হিরণ বাদশাকে দেখা গেছে।
ঘটনার বিষয়ে ইরফানের ছেলে জিদান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে আমার বাবাকে দেখতে পেয়েই সাখাওয়াত হোসেন হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করেন। পরে সাখাওয়াতের নির্দেশে তাঁর ফার্মের জুনিয়র আইনজীবীরা আমার বাবাকে মারধর করতে শুরু করেন। আমি ঠেকাতে গেলে তাঁরা আমাকেও আঘাত করেন। মারধরের একপর্যায়ে আদালতপাড়ায় দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা আমাদেরকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেন।’
নিজেও হামলার শিকার হন জানিয়ে জিদান বলেন, ‘আমি একজন প্রফেশনাল বক্সিং প্লেয়ার। হামলায় আমি আমার মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছি। আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়েও শঙ্কিত।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাখাওয়াতের অনুসারী আইনজীবী আল-আমিন বলেন, আদালতপাড়ায় কয়েকজন তাঁদের মুহুরিকে মারধর করছিলেন। এ সময় মারধর থামাতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়েছে।
ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন সাখাওয়াত হোসেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিডিওতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁরা আমার পরিচিত হতে পারে, কিন্তু আমি তো আর সেখানে ছিলাম না। ভিডিওতে আমাকে দেখাও যাচ্ছে না। আমি আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। একদল লোক আমাকে বিতর্কিত করার জন্য এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত করছে।’