অদম্য মেধাবী

ডকইয়ার্ডে কাজ করে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করেছে হৃদয়

অদম্য মেধাবী হৃদয় খাঁ
ছবি: প্রথম আলো

মাত্র পাঁচ মাস বয়সে বাবাকে হারায় হৃদয় খাঁ। আশ্রয় হয় নানার বাড়িতে। অভাবের সংসারে মা কাজ নেন দৌলতদিয়া ঘাটের একটি খাবারের হোটেলে। মায়ের উপার্জনে নানার বাড়ি থেকে হৃদয়ের লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। মাকে সহযোগিতা করতে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ডে কাজ নেয় হৃদয়। বছরের অর্ধেক সময় কাজ করে যে উপার্জন হতো, তা দিয়ে মাকে সহযোগিতার পাশাপাশি লেখাপড়ার খরচ জোগাত সে।

কথাগুলো বলছিল রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়া হৃদয় খাঁ। নিজেদের বাড়ি না থাকায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট টার্মিনাল-সংলগ্ন মজিদ শেখের পাড়া এলাকায় নানা আজাহার মণ্ডলের বাড়িতে থাকে।

হৃদয় বলে, ‘যখন বুঝতে শিখেছি, মায়ের কাছ থেকে জেনেছি, বাবার নাম ছিল রেজাউল খাঁ। মাত্র পাঁচ মাস বয়সে আমাদের ফেলে বাবা আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। এরপর আর বাবার দেখা পাইনি। নানার বাড়ি থেকে বড় হয়েছি। নানা আজাহার মণ্ডল দৌলতদিয়া ঘাটের আবাসিক হোটেলে নৈশপ্রহরী ছিলেন। মা ঘাটের একটি রেস্তোরাঁয় রান্নার কাজ করতেন। এখন যানবাহন ও যাত্রী কমে যাওয়ায় অধিকাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ। মা এখন গোবরের জ্বালানি তৈরি করে বিক্রি করেন। নানার রোজগারও বন্ধের পথে।’

পঞ্চম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় মাকে সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ডকইয়ার্ডে কাজ নেয় হৃদয়। বছরের অর্ধেক সময় কাজ ও বাকি সময় পড়াশোনা করতে সে।

এ বিষয়ে হৃদয় বলে, ‘এসএসসি পরীক্ষার দুই মাস আগেও ডকইয়ার্ডে কাজ করে বাড়িতে ফিরতাম। প্রতিদিন ৩৫০ টাকা করে মজুরি পেতাম। ওই টাকা দিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ মিটিয়েছি। টাকার অভাবে কোনো দিন প্রাইভেট পড়তে পারিনি। মূল পাঠ্যবইয়ের সহায়ক নোট-গাইডও কিনতে পারিনি। নিজের ইচ্ছাশক্তি কাজে লাগিয়ে মূল বই পড়ে পরীক্ষা দিয়েছি।’

রাজবাড়ী সরকারি কলেজে এইচএসসির পাঠ চুকিয়ে হৃদয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরিজীবী হতে চায় সে। কিন্তু কলেজে ভর্তিসহ পড়াশোনার খরচ কীভাবে মেটাবে, সেই দুশ্চিন্তা ভর করছে তার মনে।

হৃদয়ের মা বিলকিস বেগম বলেন, ‘আমার হৃদয় পরীক্ষায় ভালো করেছে জেনে আমি অনেক খুশি। হৃদয়ের মুখে কোনো দিন ভালো খাবার তো দূরের কথা, তিন বেলা খাবারও দিতে পারিনি। ভালো ফল করার পরও ওকে মিষ্টি খাওয়াতে পারিনি। আমার হৃদয় মানুষের মতো মানুষ হবে, সেই দোয়া করি।’

দৌলতদিয়া মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হৃদয়। অত্যন্ত মেধাবী ও বিনয়ী। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন তিনি। আর্থিক সহযোগিতা পেলে হৃদয় অনেক ভালো করবে বলে তাঁর বিশ্বাস।