চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে রাজকীয় বিদায় দেওয়া হয় এক শিক্ষককে। আজ সোমবার দুপুরে তোলা
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে রাজকীয় বিদায় দেওয়া হয় এক শিক্ষককে। আজ সোমবার দুপুরে তোলা

৪১ বছর ধরে মাদ্রাসায় পড়ানো শিক্ষককে ঘোড়ায় চড়িয়ে রাজকীয় বিদায়

শিক্ষকের পা ছুঁয়ে কেউ সালাম করছেন, কেউ জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন, কেউবা দূরে হাতে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলছেন। পরে একদল শিক্ষার্থী ঘোড়ার গাড়িতে তুলে দেন তাঁকে। এরপর গাড়িটি চলতে শুরু করলে চারপাশে ঘিরে ধরে এগিয়ে যান শিক্ষার্থীরাও। এভাবে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে শিক্ষার্থীরা রাজকীয় বিদায় জানিয়েছেন ৪১ বছর ধরে একটি মাদ্রাসায় পাঠদান করা এক শিক্ষককে। দৃশ্যটি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বখতিয়ারপাড়া চারপীর আউলিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার।

আজ সোমবার দুপুরে ওই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক কাজী মো. আবুল কালামকে এভাবে বিদায় জানানো হয়। অনুষ্ঠানে মাদ্রাসার বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন। কাজী মো. আবুল কালাম ১৯৮৪ সাল থেকে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করে আসছিলেন।

কাজী মো. আবুল কালাম বলেন, ‘আমার ঘর থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বে আমার কর্মস্থল। ১৯৮৪ সালে মাদ্রাসায় শিক্ষাদান শুরু করি। সেই থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানেই কাটিয়ে দিলাম। এই মাদ্রাসার শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী আমার প্রাণ। এখানে আমি শুধু চাকরি করিনি; বরং জীবন গড়েছি, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মানুষ করার চেষ্টা করেছি। দীর্ঘ ৪১ বছরের এই পথচলায় আমার অসংখ্য স্মৃতি আছে। অসংখ্য শিক্ষার্থীর সাফল্যের সাক্ষী হয়েছি। তাদের অনেকেই আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশ–বিদেশে সম্মান বয়ে আনছে, যা আমার জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’

মো. আবুল কালাম আরও বলেন, ‘আমি আজ যে ভালোবাসা ও সম্মান পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সবার এ আন্তরিকতা, এই রাজকীয় বিদায় আমাকে আজীবনের জন্য ঋণী করে রাখল। একজন শিক্ষক হিসেবে এর চেয়ে বড় সম্মান আর কিছু হতে পারে না।’

শিক্ষক আবুল কালামের বিদায় উপলক্ষে দিনভর আয়োজন করা হয় খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল ও শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণা। পরে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়। আলাদা গাড়িতে পৌঁছানো হয় উপহারসামগ্রী।

এর আগে সকাল থেকে মাদ্রাসার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বিদায় সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাজী মো. আবদুল হান্নান।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাজী মো. আবদুল হান্নান বলেন, ‘শিক্ষক কাজী মো. আবুল কালাম আমাদের প্রতিষ্ঠানের আলোকবর্তিকা ছিলেন। তিনি শুধু পাঠদানেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না; বরং শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তাঁর অবদান আমরা কোনোভাবেই ভুলতে পারব না।’