লক্ষ্মীপুরে ট্রাক থামিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে
লক্ষ্মীপুরে ট্রাক থামিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে

লক্ষ্মীপুরে ঢুকলেই টোল আদায়, অভিযোগ জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে

টার্মিনাল এলাকায় টোল আদায়ের জন্য প্রশাসন থেকে ২৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকায় ইজারা নেন আবদুল মতিন নামের জামায়াতে ইসলামীর এক নেতা। তিনি জামায়াতে ইসলামীর জেলা শহরের যুব বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

ইজারা নেওয়া হয়েছিল টার্মিনালের জন্য। তবে টোল আদায় হচ্ছে সড়ক থেকে। ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যানপ্রতি নেওয়া হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। দেওয়া হচ্ছে রসিদও। লক্ষ্মীপুরের পৌর এলাকায় নিয়মিতই দেখা যায় এ দৃশ্যের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার পৌর এলাকার উত্তর তেহমুনী, দক্ষিণ তেহমুনী, ঝুমুর এলাকা, মজু চৌধুরী হাট সড়ক ও সাবেক গোডাউন রোডে নিয়মিত টোল আদায় করা হচ্ছে। যদিও এসব এলাকার সড়ক থেকে টোল আদায়ের কোনো নিয়ম নেই। টোল নেওয়ার কথা ছিল লক্ষ্মীপুর-রায়পুর সড়কের পাশে বাঞ্ছানগর এলাকায় অবস্থিত টার্মিনাল থেকে।

পৌর প্রশাসন সূত্র জানায়, টার্মিনাল এলাকায় টোল আদায়ের জন্য প্রশাসন থেকে ২৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকায় ইজারা নেন আবদুল মতিন নামের জামায়াতে ইসলামীর এক নেতা। তিনি জামায়াতে ইসলামীর জেলা শহরের যুব বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক। চলতি বছরের ১৭ মার্চ তিনি দরপত্র পান। পরে ১৩ এপ্রিল তাঁর সঙ্গে পৌরসভা প্রশাসকের চুক্তি হয়। এ চুক্তিতে কোথায় থেকে টোল আদায় করা যাবে, কত টাকা নেওয়া হবে, তা উল্লেখ করা ছিল। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত ফির বেশি টোল আদায় না করারও নির্দেশনা রয়েছে। তবে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না।

টার্মিনাল ছাড়া সড়কেও প্রকাশ্যে টোল আদায় করা হচ্ছে। আবার ফি নেওয়া হচ্ছে নির্ধারিত হারের চেয়ে কয়েক গুণ। এ কারণে পরিবহনমালিকদের খরচ বেড়েছে। চালক-শ্রমিকেরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
ট্রাকচালক আবুল কাশেম

অবৈধ এ টোল আদায় নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলার যানবাহনের মালিক ও শ্রমিকেরা। ইতিমধ্যে তাঁরা এ টোল বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন। জানতে চাইলে এসব কর্মসূচিতে থাকা ট্রাকচালক ফারুক হোসেন ও আবুল কাশেম বলেন, টার্মিনাল ছাড়া সড়কেও প্রকাশ্যে টোল আদায় হচ্ছে। আবার ফি নেওয়া হচ্ছে নির্ধারিত হারের চেয়ে কয়েক গুণ। এ কারণে পরিবহনমালিকদের খরচ বেড়েছে। চালক-শ্রমিকেরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

ঢাকা থেকে রামগতি অভিমুখী ট্রাকচালক মাসুদ মিয়া বলেন, পথে চারটি পৌরসভা পার হলেও কোথাও টোল দিতে হয়নি। লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকায় ঝুমুরে তাঁকে ১০০ টাকা দিতে হয়েছে। ট্রাকচালক আবদুল কাদের বলেন, ‘সড়কে দাঁড় করিয়ে জোর করে টোল নেন। দিনে একাধিকবার টাকা দিতে হয়।’ আরেক চালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টার্মিনাল ছাড়া টোল নেওয়া নিষেধ, সেটা সবাই জানে। তবু লক্ষ্মীপুরে ঢুকলেই টাকা চায়। আমরা এটির অবসান চাই।’

যা বলছেন ইজারাদার

সড়ক থেকে অবৈধ এ টোল আদায়ের কথা স্বীকার করেন ইজারাদার ও জামায়াত নেতা আবদুল মতিন। তবে তিনি দাবি করেন, ইজারা তাঁর নামে নেওয়া থাকলেও তিনি এ কাজের আর যুক্ত নন। তাঁর কয়েকজন অংশীদার এখন টোল আদায় করেন। দল থেকে নিষেধ করায় তিনি আর টোল নেন না।

আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় বিএনপির নেতা লোকমান হোসেনসহ কয়েকজনের সঙ্গে সমঝোতা করে তিনি ইজারা নিয়েছিলেন। এ কারণে তাঁকে আরও বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ৫০ টাকা টোল নেওয়ার কথা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। এসব কারণে কাগজে তাঁর নাম থাকলেও তিনি সরে এসেছেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন লক্ষ্মীপুর পৌর বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক লোকমান হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইজারার জন্য ১৮ জন দরপত্র নিয়েছিলেন। তবে আবদুল মতিনই ইজারা পেয়েছেন। এখন তাঁর লোকজনই সড়ক থেকে টোল আদায় করছেন। এর সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত নন।

জানতে চাইলে পৌর প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, টার্মিনালের বাইরে ও অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ তিনি শুনেছেন। তবে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানের বাইরে বা বেশি টাকা আদায়ের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল হক বলেন, টোল আদায়কারীদের ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধভাবে টোল আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। এরপরও কেউ করলে মামলা করা হবে।