Thank you for trying Sticky AMP!!

‘নাসিরনগর থেকে তোমার নাম মুছে যাবে’, ইউপি চেয়ারম্যানকে হুমকি সংসদ সদস্যের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে যোগ দেওয়ায় উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্য জনসভায় হুমকি দিয়েছেন নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য। হুমকির ওই ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে সম্প্রতি একজন সাংবাদিককে হুমকি দিয়েছিলেন তিনি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। এই আসনে আওয়ামী লীগের তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাবেক একাধিক নেতা-কর্মী এবং বর্তমান ও সাবেক একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান একরামুজ্জামানকে সমর্থন দিয়ে তাঁর পক্ষে কাজ করছেন। ফরহাদ, একরামুজ্জামানসহ এখানে পাঁচজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কুন্ডা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন। সেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ভূঁইয়ার উদ্দেশে সংসদ সদস্য বলেন, ‘এই নাসিরনগর থেকে তোমার নাম মুছে যাবে।’

Also Read: সাংবাদিককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিলেন সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন

৬ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেনকে বলতে দেখা যায়, ‘নাসির, আপনাদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। আমি খুব অবাক হয়ে গেছি। আগের দিন আমার সঙ্গে সে মিছিল করেছে নৌকার। হঠাৎ কী হলো! আমি তো জানতাম নাসির, তোমার ভাইয়েরা শিক্ষিত। তোমার বড় ভাইয়েরা শিক্ষিত। তুমি একজন শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। এ তো কথা–কাজের অমিল। কিন্তু তুমি মনে রেখো, তুমি খালি কুন্ডাবাসী নয়, তুমি, এই নাসিরনগর থেকে তোমার নাম মুছে যাবে। আমি আজকে বলে দিয়ে গেলাম। নড়চড় মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। এটা আমি বলছি।’

ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, ‘তুমি নৌকায় উঠে নৌকার পিঠে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করবা, তুমি বোকার স্বর্গে বসবাস করছ, নাসির। এটা তোমাকে পরিষ্কার বলে দিলাম। আমি তোমার মতো শিক্ষিত ছেলের কাছে এটা আশা করি না, আশা করি নাই, আশা করি নাই। নাসিরনগরের রাজনীতিতে অনেক খেলকিবাজি দেখা যাচ্ছে। আমি তাদের উদ্দেশে বলি, অনেকে বলে তারা দেখে নেবে নৌকাকে। আজকে যে বড় নেতা হিসেবে নির্বাচনের হাটে নিজেকে বিক্রি করে দিলেন, আমি কথা দিয়ে গেলাম, আমি বলছি অবশ্যই নাসিরনগরবাসী এদের বিচার করবে, কাউকে ক্ষমা করবে না। যারা নৌকা থেকে নেমে যায়, নৌকার মানুষ তাদের ক্ষমা করে না এবং করবেও না, এটি আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

Also Read: বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত একরামুজ্জামানের পাশে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

সংসদ সদস্যের বক্তব্যের বিষয়ে কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকাশ্যে জনসেবায় নাসিরনগর থেকে আমার নাম মুছে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এতে আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি। গত ২৬ নভেম্বর তাঁকে (ফরহাদ হোসেন) এলাকায় গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু সভা, সমাবেশ বা মিছিলে যাইনি। আমার ইউনিয়নে সর্বস্তরের লোকজন চাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী একরামুজ্জামান সাহেবের নির্বাচন করতে। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থীর কলার ছড়ি প্রতীকের নির্বাচন করছি। এলাকার লোকজনের বিপক্ষে যাওয়ার কোনো সুযোগ আমার নেই।’ এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি।

বক্তব্যের বিষয়ে আওয়ামী লীগ–মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি আমার কথা নয়, এলাকাবাসীর কথা। আমি একটি সভায় আছি, পরে কথা হবে।’

Also Read: নাসিরনগরে একরামুজ্জামানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করল উপজেলা বিএনপি

কুন্ডা ইউপির চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ এখনো আসেনি জানিয়ে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহাগ রানা প্রথম আলোকে বলেন, তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যটি তাঁর নজরে এসেছে।

এর আগে ১৮ ডিসেম্বর দৈনিক সমকালের নাসিরনগর উপজেলা প্রতিনিধি মুরাদ মৃধাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন। উপজেলা সদরের শহীদ মিনারের সামনের সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল ও গাড়িবহর নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি ওই সাংবাদিককে বলেন, ‘ইয়ে সাংবাদিক ভাই, আপনে আর আমার ছবি তুইলেন না। আপনার তো অনেক উপকার করছি, এই জন্য থ্যাংক ইউ। এমপি না হই, দেখা হবে আপনার সঙ্গে, ঠিক আছে।’ গাড়িতে করে চলে যাওয়ার সময় আঙুল তুলে হুমকির সুরে তিনি বলেন, ‘আপনি কত বড় কী, আমি দেখে নিব।’