ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দুই গ্রামের বিরোধে বন্ধ নিকটবর্তী বাজার। ভয়ে কেউ বাজারে আসছেন না। শনিবার দুপুরে পাবনার চাটমোহর উপজেলার আটলংকায়
ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দুই গ্রামের বিরোধে বন্ধ নিকটবর্তী বাজার। ভয়ে কেউ বাজারে আসছেন না। শনিবার দুপুরে পাবনার চাটমোহর উপজেলার আটলংকায়

ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দুই গ্রামের দ্বন্দ্ব, বাজার বন্ধ, বন্ধ মুখ দেখাদেখিও

সরকারি জমিতে ঈদগাহ মাঠ। যেখানে নামাজ পড়তেন দুই গ্রামের বাসিন্দারা। কিছুদিন ধরে এক গ্রাম বলছে মাঠটির মালিক তারা। বিষয়টি মানছে না অন্য গ্রাম। এ নিয়ে শুরু হয়েছে দুই গ্রামের দ্বন্দ্ব। কেউ কারও ছায়া মাড়াচ্ছেন না, মুখ দেখছেন না। বন্ধ করে দিয়েছেন এক গ্রাম দিয়ে অন্য গ্রামের মানুষের চলাচল। বন্ধ হয়ে আছে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের প্রায় ৩০টি দোকান। একে অপরের ভয়ে দুই পক্ষই আসছে না বাজারে।

ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের বন্যাগাড়ি ও আটলংকা গ্রামে। ঘটনায় বন্যাগাড়ির বাসিন্দারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগ ও দুই গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউনিয়নের আটলংকা বাজারের পাশে চিকনাই নদের ধারে সরকারি জমিতে একটি ঈদগাহ মাঠ রয়েছে। দুই ঈদে মাঠটিতে বন্যাগাড়ি ও আটলংকা গ্রামের বাসিন্দারা নামাজ আদায় করতেন। সম্প্রতি আটলংকা গ্রামের বাসিন্দারা মাঠটি শুধু তাঁদের বলে দাবি করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন বন্যাগাড়ির বাসিন্দারা। শুরু হয় দুই গ্রামের বিরোধ। এতে ২ অক্টোবর দুই গ্রামের বাসিন্দারা সংঘর্ষে জড়ান। এতে কয়েকজন আহত হন। এর পর থেকে দুই পক্ষ একে অপরের ছায়া মাড়ানো বাদ দেন। নিজেদের মধ্যে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন গ্রাম দুটির বাসিন্দারা। একে অপরের ভয়ে বন্ধ হয়ে যায় আটলংকা বাজারের প্রায় ৩০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বন্যগাড়ির বাসিন্দাদের রয়েছে প্রায় ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বন্যাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, আটলংকার বাসিন্দারা তাঁদের বাজারে যেতে দিচ্ছেন না। তাই তাঁরা দোকান খুলতে পারছেন না। অন্যদিকে একই অভিযোগ আটলংকা গ্রামের বাসিন্দাদেরও।

শনিবার বাজারটি ঘুরে দেখা গেছে, দুই গ্রামের মাঝামাঝি বাজারটির অবস্থান। দোকানের সংখ্যা অর্ধশতাধিক, অধিকাংশই বন্ধ। জনমানবও নেই তেমন, সুনসান নীরবতা চলছে। বাজারের মামুন টেইলার্সের মালিক আল মামুন বলেন, ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দ্বন্দ্বে তাঁরা খুব বিপদে আছেন। বাজারে এলে আটলংকার লোকজন তাঁদের ধাওয়া করছেন। তাই ১৫ দিন ধরে দোকান বন্ধ। এতে পরিবার নিয়ে খুব বিপদে আছেন ব্যবসায়ীরা।

মুদিদোকানদার মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘পিরায় ১৫ দিন হলো দুকান খুলবের পারতেছিনে। মালপত্র নষ্ট হয়া যাচ্ছে। আমরা ইয়ের একটা বিহেত (ব্যবস্থা) চাচ্ছি।’ বাজারের রড, সিমেন্ট ও ঢেউটিন ব্যবসায়ী ফজলুল হক। ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সমস্যা দুই গ্রামের প্রধানদের। আর ভুক্তভোগী হচ্ছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। ১৫ দিন দোকান বন্ধ থাকায় ঋণের কিস্তি দিতে পারছি না। খুব কষ্টে দিন কাটছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।’

জানতে চাইলে আটলংকা গ্রামের বাসিন্দা হারেস আলী বলেন, বন্যাগাড়ি তাঁদের গ্রামের রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে। রাস্তা দিয়ে আটলংকার কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ গেলে হেনস্তা করা হচ্ছে। নারীরা তাঁদের বাচ্চাদের স্কুলে খাবার দিতে গেলেও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। এটা মেনে নেওয়ার মতো নয়। আটলংকা গ্রামের মাহমুদুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি জটিল। গ্রামের মুরব্বিদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দেখি কী করা যায়।’

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনজুরুল আলম প্রথম আলোকে জানান, ঈদগাহ মাঠের জায়গাটি সরকারি। ইতিমধ্যেই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেখানে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দুই গ্রামের বাসিন্দারা মাঠটি তাঁদের বলে দাবি করছেন। বিরোধ মীমাংসায় ইতিমধ্যে দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। আশা করা যায়, দু–এক দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।