
চাকসু নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে পাহাড়িদের পোশাক পরা কয়েকজনের সঙ্গে নিজের ফেসবুক আইডিতে ছবি আপলোড করেছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী জিহাদ হোসাইন। ছবির নিচে লেখা ছিল ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’। সমালোচনার মুখে তিনি ছবিগুলো মুছে দেন এবং ক্ষমা চান। তবে তাঁর এই পোস্টের কারণে নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে দাবি করেছে বাম ধারার গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট–সমর্থিত ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেলের প্রার্থীরা।
বৈচিত্র্যের ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীদের অভিযোগ, পাহাড়িদের যে পোশাক পরা ছবি দেওয়া হয়েছে, তা নারীদের পোশাক। সেই পোশাক পরে ছবি তুলেছেন পুরুষেরা। এতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পোশাক ও সংস্কৃতি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে বৈচিত্র্যের ঐক্য প্যানেলের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। বৈচিত্র্যের ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি ভিপি প্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া, জিএস প্রার্থী সুদর্শন চাকমা ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম (জশদ জাকির) এ অভিযোগপত্রে সই করেন। এতে তাঁরা বলেন, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী জিহাদ হোসাইন গতকাল শুক্রবার নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে দুটি ছবি পোস্ট করেছেন। পোস্টে পাহাড়ি সংস্কৃতিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি একটি সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক অনুভূতিতে আঘাত আনে। এ ধরনের কাজ আচরণবিধির ৫–এর ‘গ’ ও ১০–এর ‘ক’ ধারার লঙ্ঘন।
পাশাপাশি শিবির–সমর্থিত সম্প্রীতি শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর বিরুদ্ধেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দেয় বৈচিত্র্যের ঐক্য প্যানেল। অভিযোগে বলা হয়, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব গত বুধবার বেলা ১১টা ৪ মিনিটে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের ১১২ নম্বর ক্লাসরুমে প্রবেশ করে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। এটি চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধির ৪এর ‘ঙ’ ও ৬এর ‘জ’ ধারার লঙ্ঘন।
‘পাহাড়ি নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পুরুষদের দিয়ে পরিয়ে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা একটি জাতির সংস্কৃতিকে অবমাননা করার শামিল। এটা যেকোনো জাতির জন্য মানহানিকর এবং আমাদের সম্প্রদায়ের অনুভূতির ওপর সরাসরি আঘাত, যা চাকসু নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন।’সুদর্শন চাকমা, জিএস প্রার্থী, বৈচিত্র্যের ঐক্য প্যানেল।
উল্লেখ্য, চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিতে ‘ব্যক্তিগত আক্রমণ, ধর্মীয় বা বর্ণবৈষম্যমূলক উসকানি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়—এমন বক্তব্য বা পোস্টও আচরণবিধিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, ‘নির্বাচনী প্রচারণার সময় ব্যক্তিগত চরিত্র, লিঙ্গ বা সম্প্রদায় নিয়ে আক্রমণাত্মক, উসকানিমূলক বা মানহানিকর মন্তব্য করা যাবে না। এ ছাড়া ‘শ্রেণিকক্ষ বা করিডরে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা বা মিছিল করা যাবে না’ বলে উল্লেখ রয়েছে।’
জানতে চাইলে বৈচিত্র্যের ঐক্যের জিএস প্রার্থী সুদর্শন চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সুস্পষ্ট প্রমাণসহ নির্বাচন কমিশনকে অভিযোগ দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে তাঁদের আশা।
সুদর্শন চাকমা আরও বলেন, ‘পাহাড়ি নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পুরুষদের দিয়ে পরিয়ে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা একটি জাতির সংস্কৃতিকে অবমাননা করার শামিল। এটা যেকোনো জাতির জন্য মানহানিকর এবং আমাদের সম্প্রদায়ের অনুভূতির ওপর সরাসরি আঘাত যা চাকসু নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন। ’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চাইলে শিবির–সমর্থিত প্যানেলের সহসাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী জিহাদ হোসাইন বলেন, পাহাড়িদের পোশাক সম্পর্কে তাঁর সম্পূর্ণ জানা ছিল না। তিনি ভিডিওর মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর অজ্ঞতার কারণে বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।
পাশাপাশি জিএস প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর এক জুনিয়র তাঁকে কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে সমাজবিজ্ঞান অনুষদে নিয়েছিল। তিনি ক্লাসে কোনো প্রচারণা চালাননি। প্রচারপত্রও নিয়ে যাননি। আর কোনো ক্লাসে গিয়েছিলেন সেটিও তাঁর মনে নেই।’
অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচনের প্রধান কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের আচরণবিধি কমিটির পরিচালক নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। আশা করি, অভিযোগকারীরা এর সুফল পাবেন।’