
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর লুটের মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দেওয়ার ঘটনায় উপজেলা বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে জেলা বিএনপি। আজ বুধবার সকালে জেলা বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত এ নোটিশ তাঁদের কাছে পাঠানো হয়।
নোটিশ পাওয়া দুই নেতা হলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নান ও সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর। তাঁরা গত সোমবার উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্র থেকে পদ স্থগিত হওয়া সাহাব উদ্দিনের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নিঃশর্ত মুক্তি চান। বিবৃতিতে তাঁরা দাবি করেন, সাহাব উদ্দিনকে সাদাপাথর লুটের মামলায় মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং মিথ্যা অভিযোগে তাঁর পদ স্থগিত হয়েছে।
কারণ দর্শানোর নোটিশে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর কাছে সশরীর উপস্থিত হয়ে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। তাঁদের দায়িত্বহীনতা ও সংগঠনের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে কেন তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, মূলত এর লিখিত জবাব চাওয়া হয়।
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের সব দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকাবস্থায় তাঁর পক্ষে আপনারা গণমাধ্যমে বিবৃতি প্রদান করেছেন, যা সরাসরি বিএনপির নীতি, আদর্শ ও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল।’
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সাংগঠনিক পরিপন্থী কাজ করায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দুই নেতাকে শোকজ করা হয়েছে। তাঁদের লিখিত জবাব পাওয়ার পরই এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে গত শনিবার রাতে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। গত ১১ আগস্ট কেন্দ্রীয় বিএনপি চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ দলীয় নীতি ও আদর্শবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করে।
সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। গত ১৭ মার্চ প্রথম আলোয় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ১৮ মার্চ সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭০ একর জমি উদ্ধার করে এবং পাথর ভাঙার ১০০টি যন্ত্র উচ্ছেদের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করা হয়।
সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে ‘সাদাপাথর লুটপাটে অভিযুক্ত মূলহোতা’ হিসেবে উল্লেখ করে। সাদাপাথর লুটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত ১৫ আগস্ট খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা এক হাজার থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়।