
মাদারীপুরের কালকিনিতে লোকালয়ে চলে আসা একটি বানরকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছেন স্থানীয় লোকজন। আজ শুক্রবার সকালে কালকিনি পৌর এলাকার দক্ষিণ কৃষ্ণনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে বানরটিকে একটি খালের পাড়ে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় অন্তত সাতজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দেড় মাস আগে একটি বানর কালকিনি পৌর এলাকায় ঢুকে পড়ে। খাবারের খোঁজে বানরটি কালকিনি পৌর এলাকার অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে হানা দিতে শুরু করে। স্থানীয় লোকজনের দাবি, পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে বানরটি অনেকের ওপরে আক্রমণও করেছে। ওই বানরের আক্রমণে গত দেড় মাসে শিশুসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। বানরের উৎপাত থেকে বাঁচতে স্থানীয় লোকজন বন বিভাগের সহযোগিতা চান। পরে খুলনা থেকে বন বিভাগের একটি দল কালকিনি পৌর এলাকায় বানরটি ধরতে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়।
একপর্যায় বানরের উৎপাত থেকে বাঁচতে স্থানীয় কয়েকজন যুবক আজ সকালে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ওই বানরকে খেতে দেন। পরে বানরটি অচেতন হয়ে পড়লে দক্ষিণ কৃষ্ণনগর এলাকার ১০ থেকে ১৫ জন যুবক লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে বানরটিকে মেরে ফেলেন। এরপর ওই এলাকার একটি খালপাড়ে মৃত বানরটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
কৃষ্ণনগর এলাকার বাসিন্দা লিটন ফকির বলেন, ‘দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বানরটি এই এলাকায় আসত। ওই বানরের ডান পায়ের অর্ধেক ছিল না। তবে বানরটি খুবই উৎপাত করে যাচ্ছিল। মানুষজন উৎপাত থেকে মুক্তি পেতেই বানরটি মেরে ফেলেছে। এভাবে মেরে ফেলা হয়তো ঠিক হয়নি। কিন্তু বানরটিকে না মারলে লোকজন আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতো।’
কালকিনি শহরের বাসিন্দা শামীম হোসেন বলেন, ‘অবলা প্রাণীটিকে এভাবে মেরে ফেলার পক্ষে আমি নই। সকালে শুনেছি, বানরটিকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। খবরটা কানে আসার পর থেকেই খারাপ লাগছে।’
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিংকি সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘১২–১৩ দিন আগে খুলনা থেকে বন বিভাগের একটি দল এখানে এসে দিনভর বানরটিকে ধরার জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু তারা বানরটিকে ধরতে পারেনি। কিন্তু আজ সকালে বানরটিকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি কেউ এমন কাজ করে থাকেন, তাহলে তাঁরা অন্যায় করেছেন। এভাবে একটি প্রাণীকে হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টির খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বানরটিকে যাঁরা পিটিয়ে মেরেছেন, তাঁদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম হোসেন বলেন, ‘বানরটিকে পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। বন বিভাগের পক্ষ থেকেও কিছু বলা হয়নি। বন বিভাগের কর্মকর্তারা থানায় অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদারীপুর শহরের চরমুগরিয়া এলাকায় অহরহ বানর দেখা যায়। তবে কালকিনি এলাকায় এর আগে বানরের আনাগোনা দেখা যায়নি। এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে মাদারীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যখাগদী এলাকায় শাহানাজ বেগম (৫৫) নামের এক নারী খাবারে বিষ মিশিয়ে ১৫টি বানর মেরে ফেলেন। পরে এ ঘটনায় মামলা হয় ও শাহানাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।