Thank you for trying Sticky AMP!!

শিশুদের কিডনি জটিলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে

চট্টগ্রামে শিশু কিডনি রোগীও বাড়ছে

বড়দের পাশাপাশি চট্টগ্রামে শিশুরাও কিডনি জটিলতায় ভুগছে। এক মাস থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের কিডনি জটিলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আক্রান্তের পরিমাণ বাড়তে থাকায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে শিশুদের জন্য পৃথক নেফ্রোলজি বিভাগও করা হয়।

চমেক মূল নেফ্রোলজি বিভাগটি এত দিন ছিল ৩০ শয্যার। কিন্তু সংকট মিটছে না। এখানে গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ৮০ জনের মতো। শয্যার সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতেও বিছানা দেওয়া হয়। এই বিভাগের অধীনে রয়েছে ১৬টি ডায়ালাইসার মেশিন। তার মধ্যে একটি শিশুদের জন্য।

এ ছাড়া শিশু রোগীদের কথা মাথায় রেখে ২০১৪ সালে পৃথক শিশু নেফ্রোলজি বিভাগ চালু করা হয়। প্রথমে তা ১১ শয্যার ছিল। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তা বাড়িয়ে ১৫ করা হয়। তারপরও রোগী থাকে শয্যার অতিরিক্ত, গড়ে ২০ জন।

শিশু নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মারুফ উল কাদের বলেন, বড়দের মতো শিশু কিডনি রোগীও বাড়ছে। ওয়ার্ডে জায়গার সংকুলান হয় না। একটি মাত্র ডায়ালাইসার রয়েছে, তা দিয়ে শিশুদের ডায়ালাইসিস চালানো হয়।

চিকিৎসকদের মতে, শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার একটি ধরন হচ্ছে নেফ্রোটিক সিনড্রম বা শরীর ফুলে যাওয়াজনিত কিডনি রোগ। এর কারণ অজানা। এ ছাড়া শিশুদের নানা কারণে কিডনি রোগ হতে পারে। এর মধ্যে বংশগত কারণ একটি। প্রস্রাবের সংক্রমণ, শারীরিক গঠনসহ নানা কারণ রয়েছে। আবার নবজাতক শিশু কিডনি ও মূত্রতন্ত্রের নানা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মাতে পারে।

২০২৩ সালে এই বিভাগে মোট শিশু রোগী ভর্তি হয় ৪৮৩ জন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয় ৯৫০ জন। অথচ এর আগে ২০২১ সালে রোগী ভর্তি ছিল ৩০৩ জন। বহির্বিভাগে রোগী ছিল ১ হাজার ১০০ জন।

তবে প্রাপ্তবয়স্ক রোগীও বছর বছর বাড়ছে। বড়দের নেফ্রোলজি বিভাগে গত এক বছরে প্রায় এক হাজার রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বহির্বিভাগের রোগী পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ রোগী ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছেন বলে চিকিৎসকেরা জানান। এর আগে ২০২১ সালে এক বছরে মোট রোগী ভর্তি হন ৪ হাজার ৬৬০ জন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন ৪ হাজার ৭০০ জন।

বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, কিডনি রোগী প্রতিদিনই বাড়ছে। ওয়ার্ডে জায়গা নেই। ডায়ালাইসিসের জন্যও চাপ রয়েছে।

কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করার পরিমাণও বেড়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানান। চমেক হাসপাতালের নিজস্ব ডায়ালাইসার মেশিনের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা স্যানডর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস বাংলাদেশের মাধ্যমে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হয়। দুই দিকেই ডায়ালাইসিসের জন্য চাপ রয়েছে।

জানা গেছে, হাসপাতালের ১৬টি ডায়ালাইসিস মেশিনের মধ্যে দুটি নষ্ট রয়েছে। তিনটি আপাতত বন্ধ। চমেক হাসপাতালে গত এক বছরে ডায়ালাইসিস হয়েছে ৯ হাজার ১৪৪ বার। এ বছরের প্রথম দুই মাসে ১ হাজার ৫৫০ বার ডায়ালাইসিস হয়। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ১ হাজার ৩৩৫ বার।

হাসপাতালে ছয় মাসের জন্য সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করার জন্য এককালীন জমা দিতে হয় ২০ হাজার টাকা।

এদিকে হাসপাতালের নিচতলায় অবস্থিত স্যানডরেও দিনে ৬০ জনের বেশি রোগীকে ডায়ালাইসিস দেওয়া হয়। এখানে ভর্তুকি মূল্যে ৫৬৩ টাকায় এবং পূর্ণ মূল্যে ৩ হাজার ৮২ টাকায় ডায়ালাইসিস করা হয়। ৫৬৩ টাকার বাইরের বাকি টাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্যানডরকে প্রদান করে থাকে।

খরচ চালাতে হিমশিম পরিবার
নুরুল আবছার তানভীরের যখন ১২-১৩ বছর, তখন থেকে অসুস্থ হতেন মাঝেমধ্যে। বয়স যখন ১৪ বছর, তখন ২০১৯ সালে তাঁর কিডনির জটিলতা ধরা পড়ে। তখন থেকেই তিনি কিডনি ডায়ালাইসিস করে আসছেন।

এখন তাঁর প্রতি সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। গতকাল তানভীরের সঙ্গে সন্ধ্যায় কথা হয়। তিনি তখন স্যানডরে ডায়ালাইসিসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

তানভীর বলেন, ‘আমি মাসে দুটি পূর্ণ মূল্যে করি। বাকি ছয়টি ভর্তুকি মূল্যে করতে পারি। এতে মাসে খাবার, ওষুধসহ মিলিয়ে মোট খরচ পড়ে ২০ হাজার টাকার মতো। আমার পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে আমার চিকিৎসা করাতে গিয়ে।’

যাঁরা পুরো আটবার পূর্ণ মূল্যে করবেন, তাঁদের মাসে খরচ ৪০ হাজার টাকার বেশি হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

গতকাল ডায়ালাইসিস করতে আসা আশীষ চৌধুরীর স্ত্রী শিল্পী চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘পূর্ণ মূল্যে ডায়ালাইসিস করছি দেড় বছর ধরে। মাঝেমধ্যে ভর্তুকি পেয়ে থাকি। এক সপ্তাহে আট হাজার টাকার মতো খরচ হয়।’