বই বিনিময় উৎসবে বইয়ের মানুষকে স্মরণ

পলান সরকার বই বিনিময় উৎসবে বই নিয়ে আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন পাঠকেরা। সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
ছবি: আশরাফুল আলম

হেঁটে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে মানুষের হাতে বই পৌঁছে দিতেন পলান সরকার। আজ সোমবার ছিল তাঁর ১০১তম জন্মবার্ষিকী। সে উপলক্ষে বই বিনিময়ের মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হলো প্রয়াত এই বইয়ের মানুষকে।

পলান সরকারের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বই বিনিময় উৎসবের আয়োজন করে ‘মেঘের ধাক্কা’ নামের একটি সংগঠন। উৎসবে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরীরা বই হাতে এসে হাজির হন সেখানে। অনেকেই সঙ্গে এনেছিলেন শিশুসন্তানদের।

পলান সরকার বই বিনিময় উৎসবে বই লেনদেন করেন পাঠকেরা। একে অন্যকে চেনেন না, এমন পাঠকদের মধ্যে বিভিন্ন লেখকের বই লেনদেন হয়। সোমবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

এই আয়োজনে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, পলান সরকারের ছেলে হায়দার আলী সরকার, অভিনেতা ও নির্দেশক অনন্ত হীরা, এ কে এম শামসুজ্জোহা পাটোয়ারী প্রমুখ। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, পলান সরকারের মতো মানুষেরা খুব বেশি জন্মান না। শিক্ষার প্রথাগত আলো থেকে দূরে থেকেও সমাজকে আলোকিত করতে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে এই মানুষটি বিশেষ অবদান রেখে গেছেন।

হায়দার আলী সরকার বলেন, বাবা বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু পড়াশোনার গুরুত্ব তিনি বুঝেছিলেন। তাই তিনি মানুষকে পড়াশোনায় আগ্রহী করতে চেয়েছিলেন। তিনি হেঁটে হেঁটে মানুষের কাছে বই দিয়ে আসতেন।

পলান সরকার বই বিনিময় উৎসবে বক্তব্য দিচ্ছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আয়োজক সংগঠনের পরিচালক জহির রায়হান বলেন, পলান সরকার এমন একজন ব্যক্তি, যিনি সহায়–সম্বল বিক্রি করে নিজের জীবনটা শিক্ষার জন্য উৎসর্গ করেছেন। ৯০ বছর বয়সেও তিনি প্রতিদিন ১০-১২ কিলোমিটার পথ হেঁটে মানুষের হাতে বিনা মূল্যে বই পৌঁছে দিয়েছেন।

পলান সরকারের জন্ম ১৯২১ সালে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার নূরপুর মালঞ্চী গ্রামে। ২০১৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি গ্রামের পথে হেঁটে হেঁটে বই বিলি করতেন। তাঁর এই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। নিজের টাকায় বই কিনে পাঠকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বই পড়ার আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তিনি ২০১১ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। ২০০৭ সালে সরকারিভাবে তাঁর বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার করে দেওয়া হয়।