
সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন ড্যানিলুইৎজ বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত ছিল বলে প্রচার করে থাকে বিগত সরকার আর তার সমর্থকেরা। তাদের ওই প্রচারণা মিথ (কল্পকাহিনি)। কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে (এনএসইউ) অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ড্যানিলুইৎজ বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এ মন্তব্য করেন। ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষিতে জুলাই বিপ্লবের তাৎপর্য: পেছন ফিরে দেখা, সামনে এগিয়ে চলা’ শীর্ষক ওই সেমিনারের আয়োজন করে এনএসইউর সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি)।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আবদুল হান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেনেভায় বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এবং এসআইপিজির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মুহাম্মদ সুফিউর রহমান। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান কীভাবে ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে তা বলতে গিয়ে ২০০৭-০৮ সালের সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলের প্রসঙ্গ টানেন।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনীতি বিভাগের সাবেক প্রধান জন ড্যানিলুইৎজ বলেন, গত জুলাই-আগস্টে এখানে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিল বলে বিগত সরকার আর তাদের সমর্থকেরা প্রচার করে থাকে। তাদের এই প্রচারণা মিথ। তিনি বলেন, ‘মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাইনি। আমি তাদের (বিগত সরকার আর তাদের সমর্থকেরা) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ দিতে বলেছি। কিন্তু তারা কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিবর্তনে যুক্ত ছিল না, তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।’
জন ড্যানিলুইৎজ গত আগস্টের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এক-এগারোর কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে বিশ্বাস করেন, যেসব ঘটনাপ্রবাহের কারণে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছিল, তাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত ছিল। হয়তো আপনারা আমার কথা বিশ্বাস করবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের এতে কোনো ভূমিকা ছিল না। পরের দুই বছর বাংলাদেশের কাজের ধারা কেমন হবে, সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তখনকার সেনা নেতৃত্ব।’ তিনি বলেন, এর মানে কিন্তু এটা নয় যে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির আগের ঘটনাপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো উদ্বেগ ছিল না। এর মানে আবার এটাও নয় যে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৭-০৮ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত থেকে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কাজ করেনি।
ড্যানিলুইৎজ বলেন, ওই সময়কালের (এক-এগারো) প্রসঙ্গ এ জন্যই উল্লেখ করছেন, কারণ এখনকার (গত জুলাই-আগস্ট) পরিবর্তনের জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ততার কথা বলা হচ্ছে।
এসআইপিজির পরিচালক শেখ তৌফিক এম হক আলোচনায় সঞ্চালনা করেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান, এনএসইউ বিজনেস স্কুলের ডিন এ কে এম ওয়ারেসুল ইসলাম এবং বিজিএমওএ সভাপতি ফয়সল সামাদ।