Thank you for trying Sticky AMP!!

নরসিংদীর ছেলে এখন নাসার গবেষক

৩ জানুয়ারি নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরিতে (জেপিএল) যোগ দিয়েছেন আল ইমরান

চাঁদের মাটিতে মানুষের প্রথম পা রাখার গল্প ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ে পড়েছিলেন আল ইমরান। এই গল্প তাঁর মনে গেঁথে গিয়েছিল। তখন থেকেই মহাকাশ নিয়ে তাঁর কৌতূহল, আগ্রহ।

ছোটবেলায় জোছনারাতে ইমরান অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকাতেন। মনে মনে ভাবতেন, চাঁদে মানুষ গেল কীভাবে? তিনি কি কখনো চাঁদে যেতে পারবেন? চাঁদে কী আছে? সেখানে গিয়ে কি থাকা সম্ভব?

মহাকাশ নিয়ে ইমরানের ছোটবেলার এই আগ্রহ শেষ পর্যন্ত তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) গবেষক বানিয়েছে।

চলতি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ইমরান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেপিএলে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

নাসার জেপিএলে পা রেখেছেন আল ইমরান

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় জেপিএল অবস্থিত। নাসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মর্যাদাসম্পন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোর একটি জেপিএল।

জেপিএলের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেক)। জেপিএলের অর্থায়নে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার। নাসার জন্য মনুষ্যবিহীন নভোযান তৈরি, পরিচালনা ও গবেষণার কাজ করে জেপিএল।

জেপিএলে ইমরানের কাজের ক্ষেত্র হলো মঙ্গলগ্রহ। মঙ্গল গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য বসবাসযোগ্য পরিবেশ অনুসন্ধানে (ডিসকভারি) কাজ করবেন তিনি। এই গবেষণাকাজে তাঁর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আছেন জেপিএলের গবেষণা বিজ্ঞানী ক্যাথরিন স্ট্যাক মরগান।

ইমরানের (৩৩) বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার পশ্চিম রামপুর। তাঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম। মা মাহমুদা খাতুন গৃহিণী।

নাসার জেপিএলে আল ইমরান

নিজ এলাকায় স্কুল-কলেজের পাঠ শেষে ইমরান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ইমরান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম। তাই বিজ্ঞানের মৌলিক কোনো বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয় পাই। তাই এই বিভাগেই ভর্তি হই।’

স্কুল-কলেজের পরীক্ষাগুলোতে খুব ভালো ফল কখনো করেননি ইমরান। এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই, আমি অনেকবার ফেলও করেছি।’

এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে চতুর্থ বিষয় ছাড়া ইমরানের জিপিএ ৩.৫৭। এইচএসসিতে ৪.৪। তবে অনার্সে এসে বদলে যান ইমরান। তিনি অনার্স ও মাস্টার্স উভয় পরীক্ষায় প্রথম হন। অনার্সে তাঁর সিজিপিএ ৩.৬৯। মাস্টার্সে ৩.৯৭।

জেপিএলে ইমরানের কাজের ক্ষেত্র হলো মঙ্গলগ্রহ

ঢাবিতে মাস্টার্সে ইমরানের সহপাঠী ছিলেন আলী হাসান সরকার। তিনি বলেন, ‘ইমরান গতানুগতিক মেধাবী ছিলেন না। তিনি কঠোর পরিশ্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা ফলাফল করেছেন।’

অনার্স-মাস্টার্স শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ইমরানের। এ জন্য তিনি একাধিকবার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কোনোবারই তিনি নিয়োগের জন্য বিবেচিত হননি।

ইমরান বলেন, ‘আমাকে কেন নেওয়া হয়নি, তা জানি না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি না হওয়াটা আমার জন্য ভালোই হয়েছে। একটা দরজা বন্ধ হয়ে গেলে অনেকগুলো দরজা খুলে যায়। ঢাবিতে শিক্ষক হিসেবে চাকরি না হওয়াটা আমার জন্য সম্ভাবনার বড় দুয়ার খুলে দিয়েছে।’

উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার ভাবনা আগে থেকেই ছিল ইমরানের। ২০১৭ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামার অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্ল্যানেটারি জিওসায়েন্সে মাস্টার্স করেন তিনি। অর্জন করেন পূর্ণ সিজিপিএ ৪।

আল ইমরান ইউনিভার্সিটি অব আরকানসাসে পিএইচডি করেছেন

২০২২ সালে ইমরান ইউনিভার্সিটি অব আরকানসাসে স্পেস অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সাইন্সে পিএইচডি করেন। পিএইচডির উৎসর্গ অংশে তিনি লেখেন, ‘মাতৃভূমি বাংলাদেশের সম্মানে।’

পিএইচডির শেষ দিকে জেপিএলে পোস্ট ডক্টরাল ফেলোর বিজ্ঞপ্তি দেখেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘জেপিএলে গবেষক হিসেবে কাজ করতে পারাটা অনেক বড় সম্মানের বিষয়। আমি উৎসাহ নিয়ে আবেদন করি। কয়েক ধাপের যাচাই-বাছাই, পরীক্ষা, সাক্ষাৎকার শেষে জেপিএলে গবেষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাই।’

৩ জানুয়ারি জেপিএলে যোগ দেন ইমরান। এ নিয়ে তিনি তাঁর ফেসবুকে পোস্ট দেন। তাঁর ছবি ও পোস্ট সংযুক্ত করে নরসিংদীর মনোহরদী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান মাসুদ পারভেজ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গেরামের ছাওয়াল (ছেলে) আল ইমরান এখন নাসায়...হৃদয় উৎসারিত অভিনন্দন।’

জেপিএলের ওয়েবসাইটে পোস্ট ডক্টরাল ফেলোর তালিকায় ইমরানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে তাঁর কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

ইমরান বলেন, ‘জীবনে কিছু হারালে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। জীবন আরও অনেক সম্ভাবনা নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ়তা দিয়ে এই সম্ভাবনাকে লুফে নিতে হয়। আমিও তাই করেছি।’

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে মহাকাশ গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে চান আল ইমরান

মহাকাশ নিয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক জার্নালে ইমরানের বেশ কয়েকটি গবেষণা নিবন্ধ রয়েছে। গবেষণার কাজটি আরও নিবিষ্টভাবে করতে চান তিনি। একই সঙ্গে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে মহাকাশ গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে চান তিনি।

নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রেখেছিলেন। চাঁদের বুকে পা রেখে তিনি বলেছিলেন, এটি একজন মানুষের জন্য ছোট্ট একটি পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির জন্য এক বিরাট এক অগ্রগতি।

নীল আর্মস্ট্রংয়ের এই উদ্ধৃতি ধার করে ইমরান বলেন, ‘পৃথিবীর বাইরের জগৎকে জানতে পারলে, তা পুরো মানবজাতির জন্যই সুফল বয়ে আনবে।’