Thank you for trying Sticky AMP!!

চারজনকে হারিয়ে পরিবারে মাতম

নৌকাডুবিতে দুই সন্তানের মৃত্যুতে মায়ের আহাজারি। গতকাল বিকেলে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে

সামনে শারদীয় দুর্গোৎসব, চারদিকে খুশির ধুম পড়েছে। কদিন ধরেই বিষ্ণুর আবদার, বাবা, নতুন কাপড় কিনে দাও। বাবা বিষ্ণুকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, মহালয়া শেষ হোক, তবেই নতুন কাপড় কেনা যাবে। এ কথা শুনে বিষ্ণুর সে কী আনন্দ! সেই মহালয়ার দিনেই নৌকাডুবিতে প্রাণ গেল বিষ্ণুর (৩)।

বিষ্ণুর বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের হাতিডুবা ছত্রশিকারপুর গ্রামে। তার বাবার নাম রবিন চন্দ্র। গতকাল রোববার পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় মায়ের সঙ্গে মারা যায় বিষ্ণু।

গতকাল সন্ধ্যায় বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ছেলে বিষ্ণুর লাশ ফেরত পাওয়ার পর স্ত্রী ও ছেলের লাশের পাশে বসে বিলাপ করছিলেন রবিন চন্দ্র। শুধু স্ত্রী–সন্তান নয়, রবিন হারিয়েছেন আরও দুই স্বজনকে। নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন রবিনের ছোট ভাই কার্তিক রায়ের স্ত্রী লক্ষ্মী রানী (২৫) ও বড় ভাই বাবুল রায়ের ছেলে দীপঙ্কর (৩)।

বিলাপ করতে করতেই ভাটাশ্রমিক রবিন বলছিলেন, ‘বাচ্চাগুলোর নতুন কাপড়চোপড় কেনার জন্য টাকা জোগাড় করেছিলাম। সেই টাকা এখন স্ত্রী–সন্তানের সৎকারে খরচ হবে ভাবিনি। আমার সব শেষ হয়ে গেল।’

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সেজেগুজে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন রবিনের স্ত্রী–সন্তান। বেলা একটার দিকে আউলিয়ার ঘাটে পৌঁছান তাঁরা। পথে কিছুটা দেরি হয়। উদ্দেশ্য বদেশ্বরী মন্দিরের মহালয়ার অনুষ্ঠানে আগেভাগেই যোগ দেওয়া। তড়িঘড়ি করে ভিড়ের মধ্যেই নৌকায় ওঠেন তাঁরা।

কিছু দূর যেতেই দুলতে থাকে নৌকাটি। শুরু হয় চিৎকার–চেঁচামেচি আর আর্তনাদ। দেখতে দেখতে ডুবে যায় নৌকাটি। এতে নৌকায় থাকা ৭০ থেকে ৮০ জন যাত্রীর সবাই পানিতে ডুবে যান। কেউ কেউ সাঁতরে পাড়ে উঠে এলেও মৃত্যু হয় ২৪ জনের। এর মধ্যে রবিনের পরিবারের রয়েছেন চারজন।

সেই নৌকায় ছিল এক কিশোর (১৫)। নাম তার দীপু। সাঁতরে পাড়ে এসে আবার ফিরে যায় নদীতে। দীপু বলে, ‘আমি নিজেই তিনটি লাশ তুলে এনেছি। এর মধ্যে তারা রানী তাঁর ছেলে বিষ্ণুকে বুকে জড়িয়ে ছিলেন। অচেতন তারা রানীর কোলে তখনো শিশুটি নড়াচড়া করছিল। মায়ের বুক থেকে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকাডুবিতে আমার ইউনিয়নেরই সাতজন মারা গেছেন। এর মধ্যে রবিনের স্বজনই চারজন। এ ঘটনায় ওই পরিবারটিতে মাতম শুরু হয়েছে।’

Also Read: পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীতে নৌকা ডুবে ২৪ জনের মৃত্যু