চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে প্রগতিশীল সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চালানো সংঘবদ্ধ সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে মানবাধিকারকর্মীদের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (এসএএইচআর)। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের জন্য পরিচিত দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বাংলা দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ও উদীচীকে নিশানা করে ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ মব আক্রমণের ঘটনা ঘটে।
এর আগে ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় দুই আততায়ীর গুলিতে ওসমান হাদি আহত হন। পরে ১৮ ডিসেম্বর রাতে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
বিবৃতিতে বলা হয়, ওসমান হাদি ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একজন সাহসী তরুণ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হন তিনি। ওসমান হাদি ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে একজন সক্রিয় নেতা ছিলেন এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১৮ ডিসেম্বর মব আক্রমণের আগে বিক্ষোভকারীরা অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে এবং ব্যর্থতার অভিযোগ এনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে রাজধানী ও দেশের অন্যত্র বিক্ষোভ করেন। তরুণ এই নেতার মৃত্যুর খবর শুনে বিক্ষোভকারীরা রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো অবরোধ করেন এবং এরপর সহিংস কর্মকাণ্ড শুরু হয়।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করতে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং জানমালের সুরক্ষায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এসএএইচআর। একই সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণকে ধৈর্য ধারণ ও শান্ত থাকার এবং কোনো ধরনের ঘৃণা বা সহিংস উসকানিতে পা না দেওয়ার জন্য জোরালো আবেদন জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে এসএএইচআর বলেছে, দেশ যখন বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচন ও গণভোটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এই অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হবে।
এসএএইচআর মনে করে, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড এবং সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনার একটি স্বচ্ছ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে আইন অনুযায়ী অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর জনগণের আস্থা ফেরানো ও জোরদার করার জন্য।