Thank you for trying Sticky AMP!!

১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে উত্তরা থেকে আগারগাঁও

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। যাত্রীদের যাতায়াত–সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে।

শুরুতে মেট্রোরেল চলবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত

ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল আগামীকাল বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছে, পৌনে ১২ কিলোমিটার এই পথ পাড়ি দিতে মেট্রোরেলের সময় লাগবে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড। যানজটের নগরী ঢাকায় বাস কিংবা অন্য যানবাহনের চেয়ে এত দ্রুত যাতায়াত ঢাকাবাসীকে স্বস্তি দেবে।

শুরুতে মেট্রোরেল চলবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলার সময় ট্রেনগুলো মাঝপথে কোথাও থামবে না।

কর্তৃপক্ষ বলছে, মেট্রোরেলের চলাচল, স্টেশনে থামা, কোথায় কত গতিতে চলবে—এর পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করা হবে কেন্দ্রীয়ভাবে, একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এই ব্যবস্থা উত্তরার দিয়াবাড়ির ডিপোতে থাকা অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারে (ওসিসি) থাকবে।

Also Read: শুরুতে মাঝের কোনো স্টেশনে থামবে না মেট্রোরেল

ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটির সূত্র জানিয়েছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথে যেখানে লাইন সোজা, সেখানে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে মেট্রোরেল চলবে। আর যেখানে কিছুটা বাঁক রয়েছে, সেখানে কিছুটা কম গতিতে চলবে। পুরো ব্যবস্থা আগে থেকেই ঠিক করা আছে।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যেতে মেট্রোরেলে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড লাগবে। তবে প্রতিটি জায়গার জন্য আলাদা আলাদা গতি ঠিক করে দেওয়া আছে। তিনি জানান, তাঁরা এখন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। যাত্রীদের যাতায়াত সম্পর্কে দিকনির্দেশনা পরে ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে।

চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। গতকাল বেলা দেড়টায় রাজধানীর উত্তরার উত্তর মেট্রোরেল স্টেশনে

সাধারণ রেলপথে পাথর থাকে। কিন্তু মেট্রোরেলের লাইনে কোনো পাথর নেই। সাধারণ রেললাইনে কিছুটা পরপর জোড়া আছে। কিন্তু মেট্রোরেলের লাইনে কোনো জোড়া নেই। আসা-যাওয়ার দুটি ভিন্ন লাইন। শুধু স্টেশনে একাধিক লাইন আছে। মেট্রোরেল চলাচল করবে পুরোপুরি বিদ্যুতের মাধ্যমে। এ জন্য রেললাইনের দুই পাশে খুঁটি দিয়ে ওপরে তার টানানো হয়েছে। মেট্রোরেলের সঙ্গে ওপরের তারের সংযোগ আছে।

Also Read: মেট্রোরেলের ভাড়া ৩০ শতাংশ কমানোর পরামর্শ আইপিডির

সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেলের লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেসব লাইনে মেট্রোরেলের স্থাপনা ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিশেষ পুলিশ (এমআরটি পুলিশ) নিয়োগের আইন করা হয়েছে। তবে এখনো বিশেষ পুলিশের কাঠামো দাঁড় করানো যায়নি। আপাতত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে দুই দিকে থাকছে দুটি করে চারটি ফটক; এর প্রতিটিতে দুজন করে মোট আটজন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের তদারকে থাকবেন একজন কর্মকর্তা।

Also Read: মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে এলাকাবাসীর জন্য পুলিশের ৭ নির্দেশনা

তুরাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি স্টেশনে নয়জন পুলিশ সদস্য থাকবেন। তবে আগারগাঁও ও উত্তরা স্টেশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরও বেশি হবে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, উদ্বোধনের দিন পুলিশ ছাড়াও র‍্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরা থাকবেন। বৃহস্পতিবার থেকে স্বাভাবিকভাবে যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল চলাচল করবে। তখন পুলিশ এবং কিছু আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।

মেট্রোরেলের ভাড়া পরিশোধের জন্য ১০ বছর মেয়াদি স্থায়ী কার্ড থাকবে। এই কার্ড কিনতে লাগবে ২০০ টাকা। এরপর প্রয়োজনমতো টাকা দিয়ে (রিচার্জ) কার্ড ব্যবহার করা যাবে। এই কার্ড পেতে নিবন্ধন করতে হবে। বৃহস্পতিবারই ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের লিংক দেওয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে এক যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) জন্য নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। স্টেশন থেকে এক যাত্রার এবং দীর্ঘমেয়াদি—দুই ধরনের কার্ড পাওয়া যাবে।

মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চূড়ান্ত করেছে ডিএমটিসিএল। আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরায় মেট্রোরেল উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁও নামবেন।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে। বেলা ১১টা থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু। প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী ফলকের একটি প্রতিকৃতি উন্মোচন করবেন। এরপর শুরু হবে সুধী সমাবেশ। এতে অতিথিদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও বিপুল জমায়েতের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা বক্তৃতা করবেন। স্মারক ডাকটিকিট ও নোট উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

সমাবেশস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা উত্তর স্টেশনে আসবেন। সেখান থেকে মেট্রোরেল ছাড়বে। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী সেখানে মূল ফলক পরিদর্শন এবং স্টেশন প্রাঙ্গণে বৃক্ষ রোপণ করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী স্থায়ী কার্ড কিনে ভাড়া পরিশোধ করে প্ল্যাটফর্মে যাবেন। সেখানে অপেক্ষমাণ ট্রেন সবুজ পতাকা নেড়ে চলাচলের সংকেত দেবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁওয়ে আসবেন। উদ্বোধনী যাত্রায় মেট্রোরেলে প্রায় ২০০ অতিথি থাকতে পারেন বলে জানা গেছে।