
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
বিশ্বজুড়ে ডিসেম্বরের হিমেল হাওয়া বইলেও পশ্চিম আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির দেশ নাইজারে আজকের দিনটি উত্তপ্ত এক গৌরবের। ১৮ ডিসেম্বর নাইজারের ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’। ১৯৫৮ সালের এই দিনে নাইজার আনুষ্ঠানিকভাবে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে এসে ফরাসি কমিউনিটির অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
নাইজারের এই বিজয়ের পথ ছিল দীর্ঘ ও ধূলিমলিন। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই ফরাসিরা এই অঞ্চল শাসন করছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যখন স্বাধীনতার ঢেউ লাগে, নাইজারের মানুষও জেগে ওঠে। ১৯৫৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর আয়োজিত এক ঐতিহাসিক গণভোটে নাইজারের জনগণ তাদের ভাগ্য বেছে নেয়। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, তারা আর কেবল কলোনি বা উপনিবেশ হয়ে থাকবে না, বরং নিজেদের সংবিধান ও শাসনে চলবে। এই দিনটিই ছিল তাদের পূর্ণ স্বাধীনতার (যা অর্জিত হয় ১৯৬০ সালে) প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
নাইজারের মানুষের কাছে দিনটি আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ফিরে পাওয়ার দিন। রাজধানী নিয়ামেতে আজকের দিনে উৎসবের আমেজ থাকে। সাহারার রুক্ষ প্রান্তরে উটের পিঠে চড়ে ঐতিহ্যবাহী কুচকাওয়াজ, গান আর নাচে মেতে ওঠে দেশটির বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী। যদিও দেশটি দারিদ্র্য আর রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে লড়াই করছে, তবু ১৮ ডিসেম্বর তাদের মনে করিয়ে দেয়, তারা স্বাধীন, তারা প্রজাতন্ত্র।
বাংলাদেশের বিজয়ের ইতিহাসের সঙ্গে নাইজারের এই দিনের মিল হলো আত্মমর্যাদাবোধের। আমরা যেমন ১৯৭১ সালে নিজেদের ভাগ্য নিজেরা গড়ার অধিকার অর্জন করেছিলাম, নাইজারও ১৯৫৮ সালের এই দিনে সেই অধিকারের স্বীকৃতি আদায় করেছিল। মরুঝড়ের দেশে দিনটি তাই আশার এক অনন্ত উৎস।