বেলা তিনটায় মৌন মিছিলটি শুরু হয়ে ভিসি চত্বর ও হলপাড়া প্রদক্ষিণ করে বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। ২১ ডিসেম্বর
বেলা তিনটায় মৌন মিছিলটি শুরু হয়ে ভিসি চত্বর ও হলপাড়া প্রদক্ষিণ করে বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। ২১ ডিসেম্বর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দীপু দাস ও আয়েশা হত্যার বিচারের দাবিতে জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাসকে নৃশংস হত্যা ও লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার শিশুকন্যা আয়েশাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাসহ দেশব্যাপী মব সন্ত্রাসের বিচারের দাবিতে মৌন মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং ধর্ম অবমাননার অজুহাত বাংলাদেশে এখন একটি অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

সমাবেশ থেকে এই দুই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দীপু চন্দ্র দাসের পরিবারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

আজ রোববার বেলা তিনটায় মৌন মিছিলটি শুরু হয়ে ভিসি চত্বর ও হলপাড়া প্রদক্ষিণ করে বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মৌন মিছিলে অনেকের মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছিল। তাঁদের হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘ধর্ম সত্যের কথা বলে, মানুষ হত্যার নয়’, ‘সব ধর্মের অবমাননাকারীদেরই শাস্তির আওতায় আনা হোক’, ‘স্টপ মব কিলিংস’, ‘দীপু হত্যার বিচার চাই’, ‘আয়েশা হত্যার বিচার চাই’।

এ ছাড়া এ সময় তাঁরা ‘দীপু দাসকে পুড়িয়ে মারে, প্রশাসন কী করে’, ‘আয়েশাকে পুড়িয়ে মারে, প্রশাসন কী করে’, ‘উই ওয়ান্ট উই ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিস’, ‘উগ্রবাদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’—এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।

রাজু ভাস্কর্যের সামনে মৌন মিছিল শেষে জগন্নাথ হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) পল্লব বর্মণ বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সমাজে এমন বর্বর, জঘন্য ও নৃশংস কাজ দেখতে হচ্ছে, এ জন্য আমরা দুঃখিত ও লজ্জিত। সাত বছরের শিশু আয়েশার বাবা বিএনপির রাজনীতি করতেন বলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তাঁর বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। শিশু আয়েশার কী দোষ ছিল? এই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং ধর্ম অবমাননার অজুহাত বাংলাদেশে এখন একটি অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।’

মৌন মিছিলে অনেকের মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছিল। ২১ ডিসেম্বর

কিছু হলেই ধর্ম অবমাননার তকমা দিয়ে দেওয়া হয়, কিছু হলেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে কাউকে মেরে ফেলা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি রাষ্ট্র এভাবে চলতে পারে না। আমি স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, দীপু দাসের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানাব, দীপু দাসের পরিবারের সব সদস্যের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হওয়া আমার বোন আয়েশার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।’

এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার কালো করতে এবং হ্যাশট্যাগ হিসেবে জাস্টিস ফর দীপু ও জাস্টিস ফর আয়েশা দিতে ( #JusticeForDipu ও #JusticeForAyesha) আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আজ চরম উদ্বিগ্নতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে উল্লেখ করে জগন্নাথ হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত প্রামাণিক সমাবেশে বলেন, ‘আমাদের ৫৩ বছরের ইতিহাসে নির্যাতনের পাতায় একের পর এক নতুন কালো অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা এবং বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা বলেন, “নিজেদের সংখ্যালঘু মনে করবেন না, আপনারা এ দেশের নাগরিক।” কিন্তু যখন দেখি, আমাদের ওপর একের পর এক নির্যাতন চলছে আর রাষ্ট্রযন্ত্র নির্বাক দর্শকের ভূমিকা পালন করছে, তখন আমরা কী বলব?’

সুদীপ্ত বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রকে স্পষ্ট জানাতে চাই, আপনারা যদি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে না পারেন, তবে আমাদের নিজেদেরই ঠিক করতে হবে, আমরা কীভাবে বাঁচব।’