প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শিক্ষক, গবেষক, সংবাদকর্মীদের

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান (বাঁয়ে) ও নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান
ফাইল ছবি

প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শিক্ষক, গবেষক ও সংবাদকর্মীরা। তাঁরা এই আইনকে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য প্রতিবন্ধক উল্লেখ করে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গণমাধ্যম গবেষক এবং যুক্তরাষ্ট্রের বার্ড কলেজের ভিজিটিং অধ্যাপক ফাহমিদুল হক মনে করেন, একজনের মন্তব্য ও আরেকজনের ছবি দিয়ে যে ফটোকার্ড  প্রথম আলো তার ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেছিল, তা পাঠকের জন্য কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে বটে, কিন্তু সেটা একেবারে ‘ভুল’ হয়েছে, তা বলা যাবে না। কারণ, রিপোর্টের ভেতরে দিনমজুর জাকির ও শিশু ফুল বিক্রেতা সবুজ, উভয়েরই কথাই ছিল। বিভ্রান্তি হচ্ছে বুঝে প্রথম আলো কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেসবুক থেকে ফটোকার্ডটি সরিয়ে নেয়। প্রথম আলো অনলাইনেও সংশোধিত রিপোর্ট প্রকাশ করে। ওই রিপোর্টের নিচে সংশোধনীও দেয়।

ফাহমিদুল হকের মতে, রিপোর্টটিকে স্বাধীনতাবিরোধী, দেশবিরোধী, উদ্দেশ্যমূলক ইত্যাদি ফ্রেমে ফেলে চাঞ্চল্য তৈরির চেষ্টা করে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল। তিনি মনে করেন, অনুসন্ধানের নামে ওই টেলিভিশন যা খুঁজে বের করেছে, তা অসংলগ্ন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মাইদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের বাজারে সবকিছুর দাম যখন বাড়তি, তখন মানুষের খাবার কিনতে কষ্ট হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় ‘আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব’—এই জন–অভিজ্ঞতার প্রতিফলন সাংবাদিকের কলম থেকে বের হবে, এমনটাই স্বাভাবিক। কারণ, এটাই সাংবাদিকের কাজ।

প্রথম আলোর সম্পাদক ও নিজস্ব প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লামিংহাম স্টেট ইউনিভার্সিটির কমিউনিকেশন মিডিয়া অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের শিক্ষক জাহেদ আরমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি তৈরিই করা হয়েছে সাংবাদিকদের কাজকে ব্যাহত করার জন্য। আইনটির পরিধি এত ব্যাপক যে সরকার চাইলে যেকোনো সাংবাদিককে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করতে পারে।

প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা ও একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন প্রবাসী সংবাদকর্মীরাও। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাঙালি পত্রিকার সম্পাদক কৌশিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রশাসন অত্যুৎসাহী ভূমিকা পালন করছে এবং গণমাধ্যমের মধ্যে একধরনের ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করছে। এর ফল হিতে বিপরীত হবে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

নিউইয়র্কপ্রবাসী সংবাদকর্মী ও লেখক দর্পণ কবীরের মতে, যে ঘটনার জন্য প্রথম আলোর সম্পাদক ও নিজস্ব প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে, তা লঘু অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি। একে নিন্দনীয় ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আইনের বাতিল অথবা কয়েকটি ধারা সংশোধন জরুরি। স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রশ্নে এ আইন প্রতিবন্ধকতামূলক। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কীভাবে রক্ষা করা হয়, তা থেকে বাংলাদেশ অভিজ্ঞতা নিতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।