Thank you for trying Sticky AMP!!

কুশিয়ারার পানি প্রত্যাহারে মতৈক্য, তিস্তায় আবারও আশ্বাস

যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিরা

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ভারত থেকে সিলেটে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহারে একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের পানিসম্পদমন্ত্রীদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

প্রায় এক যুগ পর অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশে গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে একটি যৌথ সমীক্ষার বিষয়েও সম্মত হয়েছে দুই দেশ।

এদিকে তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ সত্ত্বেও এই বৈঠকে যে দীর্ঘ সমস্যার সুরাহা হবে না, তা জানা ছিল। তবু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুরোধ করে বলা হয়, যত দ্রুত সম্ভব তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি যেন সম্পাদনের চেষ্টা করা হয়। ভারতীয় প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষ থেকে পাওয়া আলাদা বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও ভারতের জলশক্তিমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

আগামী মাসে রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি চলছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

ভারতের পক্ষ থেকে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন ৫৪টি নদী রয়েছে। এই নদীগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাতটি নদীর পানিবণ্টনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আরও আটটি নদীর পানির তথ্য–উপাত্ত বিনিময়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থাৎ পানিবণ্টনের রূপরেখা তৈরির যে আলোচনা চলছে, তার পরিধি এবার আরও বেড়েছে। এ বিষয়ে জেআরসির কারিগরি পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হবে।

ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা পূর্বাভাসের তথ্য বিনিময়, নদীর পানির দূষণ রোধ, পলি ব্যবস্থাপনায় যৌথ সমীক্ষা, নদীর তীর সুরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। দুই পক্ষ কুশিয়ারার অন্তর্বর্তীকালীন সমঝোতা স্মারকের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। ত্রিপুরার সাবরুম শহরের সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য ফেনী নদীর ইনটেক পয়েন্টের স্থান ও নকশা চূড়ান্ত হওয়ার সিদ্ধান্তকে দুই পক্ষ স্বাগত জানিয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৯ সালের অক্টোবরে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী এটি চূড়ান্ত হয়েছে।

মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর বাংলাদেশের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, পানিপ্রবাহ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন নদীর সংযোগ ঘটানোর বিষয়ে ভারতের প্রস্তাব নিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিরা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

দীর্ঘ ১২ বছর পর জেআরসির বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। শেষ বৈঠকটি বসেছিল ২০১০ সালের মার্চে দিল্লিতে। বাংলাদেশের একটি সূত্র জানিয়েছে, জেআরসির পরবর্তী বৈঠকগুলো যাতে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর হতে পারে, সে জন্য দুই দেশের প্রতিনিধিরা নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন। ওই সূত্রের কথায়, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন ও অববাহিকা ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য বৈঠকে দেখা যায়নি। দুই পক্ষই মনে করছে, আলোচনার মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আরও গতি সঞ্চার করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে গঙ্গা, তিস্তা, কুশিয়ারা, মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানিবণ্টন এবং অববাহিকা ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো। নদী ব্যবস্থাপনার সব দিক নিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিরা খুঁটিনাটি আলোচনা করেছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত আদান-প্রদান ছাড়াও নদীর বাঁধ সংরক্ষণ ও পলি তোলার বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। ঠিক হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন পানিবণ্টন চুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় খসড়াকাঠামো তৈরির সময় আরও কয়েকটি অভিন্ন নদীকে সংযুক্ত করা হবে। ওই নদীগুলোর পানিপ্রবাহসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত দুই দেশ পরস্পরের সঙ্গে আদান-প্রদান করবে।