জাপানের জাতীয় পতাকা
জাপানের জাতীয় পতাকা

বিজয়ের ডিসেম্বর দেশে দেশে

জাপান: ধ্বংসস্তূপ থেকে শান্তির শিখরে

ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।

বিজয় কি শুধুই যুদ্ধে জয়? নাকি যুদ্ধের ভয়াবহতা পেছনে ফেলে শান্তির পথে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়াও একধরনের বিজয়? আজ ২৩ ডিসেম্বর, উদীয়মান সূর্যের দেশ জাপানের জন্য একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। দীর্ঘ তিন দশক (১৯৮৯-২০১৮) ধরে এই দিনটি জাপানে উদ্‌যাপিত হয়েছে ‘তেন্নো তানজোবি’ বা সম্রাটের জন্মদিন হিসেবে। এটি ছিল জাপানের ১২৫তম সম্রাট আকিহিতোর জন্মদিন, যার শাসনামলকে বলা হয় ‘হেইসেই’ যুগ, যার অর্থ—‘সর্বত্র শান্তি অর্জন।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা ও নাগাসাকির ধ্বংসলীলার পর জাপান ছিল এক মৃত্যুপুরী। কিন্তু সেই ছাইভস্ম থেকেই ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠে দেশটি। আর এই পুনরুত্থানের প্রতীক হয়ে ওঠে জাপানের রাজতন্ত্রের নতুন রূপ। সম্রাট আকিহিতো ছিলেন আধুনিক জাপানের সেই মুখ, যিনি প্রথা ভেঙে সাধারণ মানুষের কাছে নেমে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন প্রথম সম্রাট, যিনি জাপানের যুদ্ধপরবর্তী শান্তিবাদী সংবিধানের অধীন সিংহাসনে আরোহণ করেন।

জাপানের সম্রাট আকিহিতো

২৩ ডিসেম্বরের এই দিনে টোকিওর রাজপ্রাসাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সম্রাট যখন হাজারো জনতার উদ্দেশে হাত নাড়তেন, তখন সেখানে শুধু রাজভক্তি থাকত না; থাকত এক নতুন জাপানের প্রতিজ্ঞা। যেই জাপান তলোয়ার বা বন্দুক দিয়ে নয়; বরং প্রযুক্তি, অর্থনীতি আর শান্তি দিয়ে বিশ্বজয় করেছে। জাপানিদের হাতে ধরা ছোট ছোট ‘হিনোমারু’ পতাকার ঢেউ যেন সেই বিজয়েরই বার্তা দিত।

যদিও ২০১৯ সালে সম্রাটের ক্ষমতা হস্তান্তরের পর ছুটির তারিখ বদলে গেছে, তবু ২৩ ডিসেম্বর জাপানিদের কাছে হেইসেই যুগের শান্তির স্মৃতি বহন করে।

বিশ্বমানচিত্রে জাপান

বাংলাদেশের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় আমাদের যেমন ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন করে গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল, জাপানের এই দিনটিও শেখায়—সবচেয়ে বড় পরাজয়ের পরও যদি একটি জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং পরিশ্রম করে, তবে তারা বিশ্বমঞ্চে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসতে পারে। এটিই জাপানের সত্যিকারের বিজয়।