কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সংগীত পরিবেশন করছেন শিল্পীরা। সামনে (বাঁ থেকে) ইমন চৌধুরী, মিঠুন চক্র, শুভেন্দু দাস, ঈশান মজুমদার, অনিমেষ রায়; পেছনে (বাঁ থেকে) এরফান মৃধা শিবলু, পান্থ কানাই, আফরান নিশো ও মেহজাবীন চৌধুরী। গতকাল সাভারের আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমে
কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সংগীত পরিবেশন করছেন শিল্পীরা। সামনে (বাঁ থেকে) ইমন চৌধুরী, মিঠুন চক্র, শুভেন্দু দাস, ঈশান মজুমদার, অনিমেষ রায়; পেছনে (বাঁ থেকে) এরফান মৃধা শিবলু, পান্থ কানাই, আফরান নিশো ও মেহজাবীন চৌধুরী। গতকাল সাভারের আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমে

ফ্যান্টাসি কিংডমে উৎসব

শিক্ষার্থীদের অপার আনন্দের দিন

তুলার মতো সাদা মেঘের দল ভাসছিল শরতের সারা আকাশে। আর সূর্য অকৃপণভাবে তার দীপ্ত কিরণ ঢেলে দিয়েছিল দিনমান। মাথায় রোদ, মুখে হাসি নিয়ে ফ্যান্টাসি কিংডম আনন্দময় করে তুলেছিল হাজার হাজার কৃতী শিক্ষার্থী।

‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগান নিয়ে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে চলছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা উৎসব। ঢাকায় দুই দিনের উৎসব শেষ হলো গতকাল বুধবার। ঢাকাসহ মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার ৯ হাজারের বেশি কৃতী শিক্ষার্থী উৎসবে অংশ নিতে অনলাইনে নাম নিবন্ধন করে। মঙ্গলবার প্রথম দিনের উৎসবেও প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী নাম নিবন্ধন করেছিল। গত ১৭ আগস্ট জিপিএ-৫ সংবর্ধনা শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম থেকে। শেষ হবে ১৩ সেপ্টেম্বর। সারা দেশের প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থী উৎসবে অংশ নেওয়ার জন্য অনলাইনে আগাম নাম নিবন্ধন করেছে।

গতকাল সকাল নয়টা থেকেই শিক্ষার্থী ও তাদের অনেকের অভিভাবক আসতে থাকেন ফ্যান্টাসি কিংডমে। প্রবেশপথের বাইরে ছিল বুথের সারি। সেখানে নিবন্ধন নম্বর দেখিয়ে শিক্ষার্থীরা সকালের নাশতা, ক্রেস্ট, উপহার, রাইড ও দুপুরের খাবারের কুপন সংগ্রহ করে ভেতরে প্রবেশ করে। তারপর তারা মেতে ওঠে রাইডে চড়া ও বিভিন্ন ধরনের মজার মজার খেলায়।

সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাইডগুলোর সামনে লম্বা লাইন পড়ে যায়। খেলার আয়োজনগুলোতে জমে ওঠে ভিড়। প্রথম আলোর বুথে ছিল ‘ভিআর গেমিং’। প্রথম আলো বন্ধুসভার স্টলে কুইজ আর ‘বোতল ফ্লিপ’ খেলা। প্রথম আলো ট্রাস্টের স্টলে ঝুড়িতে ‘বল ফেলা’ খেলা। সফল হলেই ছিল নানান রকম নগদ পুরস্কার। খেলায় যে শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে, চারপাশ থেকে তাকে সমানে উৎসাহ দিয়ে গেছে অন্যরা। সফল হলেই হইহুল্লোড়ে–উল্লাসে মেতেছে তারা। অনেকে এসেছে প্রথমা প্রকাশনের স্টলে। উৎসব উপলক্ষে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড়ে বই বিক্রি হয়েছে এখানে।

তির ছুড়ে লক্ষ্যভেদ করা সহজ নয়, সেটা ভার্চ্যুয়ালি হলেও। ভিআর দিয়ে তির ছুড়ছিল গাজীপুর বাগবাড়ির আবদুল্লাহ আল মামুন। মোট পাঁচটি তির ছোড়ার সুযোগ ছিল প্রত্যেকের। মামুন লক্ষ্যভেদ করতে পারল দুটি। আর একটি সাফল্য পেলেই ছিল পুরস্কার। তবে পুরস্কার না পেলেও আক্ষেপ নেই তার। বন্ধুদের নিয়ে দল বেঁধে এসেছে উৎসবে।

গাজীপুর থেকে টাঁকশাল শাখা সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান এসেছিলেন মেয়ে ফারিহা তিলাতকে নিয়ে। তিনি বললেন, প্রথম আলোর এই আয়োজন তাঁদের কাছে সুন্দর মনে হয়েছে।

দুপুরের খাবারের পর জাতীয় সংগীতের সুর দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সঞ্চালক প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক আহ্বান জানালেন সম্প্রতি উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের জন্য।

এরপর জমকালো আয়োজন শুরু হয় এবারের জিপিএ-৫ উৎসবের ভাবনাসংগীত ‘হিপ হিপ হুর রে/ পাখি হয়ে আকাশে উড় রে/ আমরা সবাই জিপিএ ফাইভ’–এর সঙ্গে সমবেত নৃত্য দিয়ে। নৃত্য পরিবেশন করলেন সোহাগ ড্যান্স ট্রুপের নৃত্যশিল্পীরা। এরপর কৃতী শিক্ষার্থী হৃদিতা রেজা, ইশরাত জাহান, আরাফ খান, ফারহান ইশরাক সংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করে।

প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ শিক্ষাবিদদের নিয়ে এলেন মঞ্চে। তাঁরা অনুপ্রেরণাময় বক্তব্য দিলেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য এম আর কবির বলেন, ‘অন্যের দেখাদেখি নয়, নিজের মন যা পড়তে চায়, সেই বিষয়ে উচ্চতর পড়ালেখা করবে। দেশকে ভালোবাসবে। তোমরা চেষ্টা করবে এই পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য।’

স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সহ–উপাচার্য নওজিয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘তোমরা কখনো হীনম্মন্যতায় ভুগবে না। জীবনে, সমাজে অনেক সমস্যা থাকবে। সমাধানের চেষ্টা করবে। আত্মবিশ্বাস রাখবে। দুর্নীতি করবে না। নিজে ভালো হওয়ার চেষ্টা করবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, ‘এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগ। তোমরা যে যে বিষয়েই লেখাপড়া করো না কেন, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করা শিখবে। এটা শেখা এখন মোটেই কঠিন নয়। এটা ভবিষ্যৎ জীবনে বহু প্রয়োজনে লাগবে।’

অভিযাত্রী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখক মহুয়া রউফ তাঁর অ্যান্টার্কটিকা ও আমাজন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

এরপর শুরু হলো গানের পালা। শুভেন্দু দাস ও ইশান মজুমদার গেয়ে শোনালেন জনপ্রিয় গান, ‘গুলবাহার’ ও ‘বন্ধু চিকন কালিয়া’।

তাঁদের পরিবেশনা শেষে শিখোর একাডেমিক শাখার পরিচালক এনামুল ইসলাম তাঁদের মেন্টর ও শিক্ষকদের নিয়ে মঞ্চে আসেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, এসএসসির পরে এইচএসসির জন্য হাতে সময় বেশি থাকে না। কাজেই এই সময়টুকু খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে।

গানের পরে উৎসবের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানানো হয়। এতে অংশ নেন কনকর্ড গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা অনুপ কুমার সরকার। ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেডের (কনকা–গ্রি) ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার মো. জুলহাক হোসাইন, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী ও আম্বার আইটি লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক, অপারেশনস সুব্রত চন্দ্র সরকার।

কথাবার্তার পর আবার গানের পালা। মঞ্চে এলেন পান্থ কানাই ও অনিমেষ রায়। তাঁরা ‘নাসেক নাসেক’, ‘চুমকি চলেছে’ গানে গানে মাতিয়ে তোলেন সবাইকে। মিথ্যা, মুখস্থ ও মাদককে ‘না’ বলার শপথ করান আনিসুল হক।

তারকা কথনে অংশ নেন জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী আফরান নিশো ও মেহজাবীন চৌধুরী। মঞ্চে এসে তাঁরা বলেন, দর্শকদের ভালোবাসা ও উৎসাহ তাঁদের কাজে অনুপ্রাণিত করে। তাঁরা ‘বুক চিনচিন করছে হায়,/ মন তোমায় কাছে চায়’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন। পরে অংশগ্রহণকারী সব সংগীতশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী মঞ্চে এসে ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ গানটি গেয়ে শোনান এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেলফি তোলেন।

এরপর অনলাইন কুইজের বিজয়ী ১৫ শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। তিনি সবাইকে ভালো শিক্ষার্থী হওয়ার পাশাপাশি ভালো মানুষ হতে, দেশকে ভালোবাসতে প্রেরণা দেন। উৎসব শেষ হয়েছিল ব্যান্ড বেঙ্গল সিম্ফোনির (ইমন চৌধুরী) ‘ফুল ফুটেছে গন্ধে সারা মন,/ তুমি আমার কত যে আপন/...দেখা না দিলে বন্ধু কথা কইয়ো না’, ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানে গানে।

আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি এবং সহযোগিতায় রয়েছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, কোয়ালিটি গ্রুপ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, আকিজ টেলিকম লিমিটেড, আম্বার আইটি লিমিটেড, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।

দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে সহযোগিতা করে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।