
দেশে এখন কিডনি রোগীর সংখ্যা ২ কোটির বেশি। এই রোগীদের মধ্যে প্রতিবছর ৩৫-৪০ হাজার মানুষ কিডনি বিকল হওয়ার চূড়ান্ত ধাপে (এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ) পৌঁছে যায়। ওই রোগীদের মধ্যে মাত্র এক–চতুর্থাংশের চিকিৎসার ব্যয়ভার চালানোর সামর্থ্য থাকে। এ ছাড়া অনেকে চিকিৎসা শুরু করেও আর্থিক সংকটের কারণে ছয় মাসের মধ্যেই তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। তাই কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে রোগটি প্রতিরোধ করাটা জরুরি। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়েই কিডনি রোগ পরীক্ষার সুযোগ থাকা উচিত।
কিডনি ফাউন্ডেশনের ২১তম বার্ষিক সম্মেলন ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বিশেষজ্ঞ ও বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এ সেমিনারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘কিডনি সেবায় রূপান্তর: প্রতিরোধ থেকে প্রতিস্থাপন’।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, প্রতিরোধই কিডনি রোগ মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। কাজটি শুধু চিকিৎসকদের ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না। জনসচেতনতা তৈরির জন্য বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ধূমপানের ক্ষতি সবাই জানে, তবু তামাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো নানা কৌশলে তাদের নতুন ভোক্তা তৈরি করে। কারণ, তারা নানা উপায়ে মানুষের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারছে। কিডনির রোগ নিয়ে প্রতিরোধমূলক বার্তা ছড়িয়ে দিতেও এমন পদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে।
বাংলাদেশ ডায়বেটিক সমিতির সভাপতি এই চিকিৎসক সম্প্রাতিক সময়ের একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, মসজিদের মতো ধর্মীয় কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। এমনটি করা গেলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো যেতে পারে। অর্থাৎ, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রচার–প্রচারণার মাধ্যমে বড় ধরনের ফলাফল অর্জন করা সম্ভব। কিডনি রোগ ও ডায়াবেটিস একটি আরেকটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় এ দুটি রোগের বিষয়ে যৌথ কর্মসূচি পরিচালনা করলে সমাজে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলেও মনে করেন তিনি।
কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, দেশের ১৪ হাজার ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিদিন পাঁচ লাখ মানুষকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। এই ক্লিনিকগুলোয় সামান্য খরচে কিডনি, হার্ট ও ডায়াবেটিস শনাক্ত করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, হিসাব করে দেখা গেছে, স্বল্প খরচেই এটা করা সম্ভব। এটি করতে পারলে পরের পাঁচ বছরে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাবে। প্রতি পাঁচ লাখ মানুষের জন্য একজন নেফ্রোলজিস্ট আছেন উল্লেখ করে তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির ওপরেও জোর দেন।
সেমিনারের শুরুতে কথা বলেন কিডনি ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ) এখনো একটি বড় জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। সরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা সীমিত। ফলে এর বড় অংশের ভার বেসরকারি ও কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের মতো অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়ছে।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যের রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুহাম্মদ মাগদি ইয়াকুব। তিনি কেবল ডায়ালাইসিস যন্ত্র পরিচালনা নয়, গবেষণা ও বিজ্ঞানী তৈরির ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করি, মুহাম্মদ ইউনূস যেমন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তেমনি বাংলাদেশ একদিন মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার পাবে।’
বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ডা. অধ্যাপক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, কিডনি রোগের চিকিৎসায় সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের প্রয়োজন।