Thank you for trying Sticky AMP!!

সময়মতো উদ্ধার করা গেলে তাঁরা বেঁচে যেতেন: নিহতদের এক স্বজন

প্রাইভেট কারের ভেতরে চাপা পড়ে আছেন অন্তত তিনজন, তাঁরা সবাই মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে

রাজধানীর উত্তরায় গার্ডারের নিচে চাপা পড়া প্রাইভেট কারের মধ্য থেকে তিনজনকে দ্রুত উদ্ধার করা গেলে তাঁরা বেঁচে যেতেন বলে মনে করছেন তাঁদের এক স্বজন। জাহিদ হাসান নামের ওই ব্যক্তি প্রাইভেট কারটির পেছনের গাড়িতে ছিলেন। ঘটনার পরপরই তিনি গার্ডারের নিচে পড়ে থাকা প্রাইভেট কারটির সামনে গিয়েছিলেন। স্বজনদের এই মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলছেন তিনি।

আজ সোমবার ঢাকার দক্ষিণখানের কাওলা এলাকায় বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে নবদম্পতি ও তাঁদের স্বজনেরা প্রাইভেটকারে করে আশুলিয়ায় যাচ্ছিলেন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনের সড়কে চলন্ত অবস্থায় প্রাইভেট কারটির ওপর বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার পড়ে।

ঘটনার পরপর নবদম্পতি হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনিকে (২১) প্রাইভেট কার থেকে বের করে আনা হয়। তাঁরা উত্তরার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। দুজনই শঙ্কামুক্ত। তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে।

Also Read: বেঁচে গেলেন নবদম্পতি, হারালেন ৫ স্বজন

পরে প্রাইভেট কারের ওপর থেকে গার্ডারটি সরিয়ে গাড়িটির মধ্য থেকে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁরা হলেন, বর হৃদয়ের বাবা মো. রুবেল মিয়া (৬০), নববধূ রিয়ার মা মোছা. ফাহিমা (৩৭), ফাহিমার বোন ঝরনা (২৬) এবং তাঁর দুই সন্তান জান্নাতুল (৬) ও মো. জাকারিয়া (৪)। রুবেল মিয়া গাড়িটি চালাচ্ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী জাহিদ হাসান নববধূ রিয়ার মামা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি হত্যাকাণ্ড। গার্ডার নিয়ে ক্রেনটি কাত হয়ে ছিল। রাস্তা খোলা ছিল। আমি ছিলাম পেছনের গাড়িতে। চলন্ত গাড়ির ওপর গার্ডারটি পড়েছে। রাস্তায় কোনো ব্যারিকেড ছিল না।’

Also Read: উত্তরায় প্রাইভেট কারে গার্ডার পড়ে প্রাণ গেল পাঁচজনের

দুর্ঘটনার পর হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে কাউকে পাশে পাননি বলে হতাশা জানান জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর এসে দেখি, আমার ভাগ্নে ও বোন জীবিত। শ্বাস চলছে। বর হৃদয়ের বাবা রুবেলের হাত কাঁপছে। সময়মতো উদ্ধার করা গেলে তাঁরা বেঁচে যেতেন।’

ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতা চালাতে অনেক সময় নিতে হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এলেও উদ্ধার তৎপরতা শুরু করতে পারেননি। সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় পর গার্ডারটি সরিয়ে প্রাইভেট কার থেকে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

Also Read: ঢাকায় বউভাতের অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিল পরিবারটি

উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সাইফুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, গার্ডারটির ওজন অনেক বেশি ছিল। প্রায় ৫০ টন। এ ধরনের গার্ডার সরানোর মতো সরঞ্জাম ফায়ার সার্ভিসের নেই। এ কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা আসতে দেরি করায় তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করা যায়নি। তারা আসার পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গার্ডার সরিয়ে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় বিআরটি প্রকল্পের কাজ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের কাজ করার সময় অবশ্যই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখার কথা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজটি কেন করল, তা খতিয়ে দেখা হবে।

ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী জানান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনা কেন ঘটেছে, কারা দায়ী, সেটি কমিটি খুঁজে বের করবে। মঙ্গলবার সকালের মধ্যেই প্রতিবেদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

Also Read: রাস্তার পাশে বসে নিহত পাঁচজনের স্বজনদের আহাজারি