রাজধানীর রাপা প্লাজায় ‘জয়িতা’র নারী উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে জয়িতা ফাউন্ডেশন। আজ বুধবার বিকেলে তোলা
রাজধানীর রাপা প্লাজায় ‘জয়িতা’র নারী উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে জয়িতা ফাউন্ডেশন। আজ বুধবার বিকেলে তোলা

রাপা প্লাজায় জয়িতার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা, উদ্যোক্তারা হতাশ

রাজধানীর রাপা প্লাজায় জয়িতার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে জয়িতা ফাউন্ডেশন। এর মধ্য দিয়ে রাপা প্লাজায় জয়িতার ১৪ বছরের কার্যক্রমের অবসান ঘটল। সেখানে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সময় চেয়ে জয়িতা উদ্যোক্তাদের আবেদন উচ্চ আদালত গতকাল মঙ্গলবার খারিজ করে দেন। এ আদেশের পরপরই রাপা প্লাজার নিচে জয়িতা বিপণন কেন্দ্র ও ফুড কোর্ট বন্ধের নোটিশ টাঙিয়ে দেয় ফাউন্ডেশন।

উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, গতকাল রাপা প্লাজায় সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। ফলে জয়িতা বন্ধ ছিল। ছুটির দিনে তাঁদের না জানিয়ে ফুড কোর্টের মালামাল সরিয়ে নিয়েছে জয়িতা ফাউন্ডেশন। নিজেদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি তাঁদের। আজ বুধবার তাঁরা ফুড কোর্টে গিয়ে দেখেন, এসি নেই। চেয়ার–টেবিল একটার ওপর একটা রাখা। বিপণন কেন্দ্র থেকে পণ্যসামগ্রী আজকের মধ্যেই সরিয়ে নিতে বলা হয় তাঁদের। এত দিনের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসহায়ত্ব ও হতাশা প্রকাশ করেন তাঁরা। রাপা প্লাজার চতুর্থ তলায় জয়িতা পণ্যের জন্য ৭৮টি এবং ফুড কোর্টের জন্য ১৬টিসহ মোট ৯৪টি স্টল ছিল।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংস্থা জয়িতা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জয়িতার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। ২০১১ সালের নভেম্বরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জয়িতার যাত্রা শুরু হয়। এটি ফাউন্ডেশন হয় ২০১৬ সালে। জয়িতা ফাউন্ডেশন দেশজুড়ে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া, উদ্যোক্তাদের মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি, পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রিতে সহায়তা করে। জয়িতা ফাউন্ডেশনের অধীনে ১৫৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে ১২তলা ‘জয়িতা টাওয়ার’ নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবরে ভবন উদ্বোধন করা হলেও তা এখনো চালু হয়নি। শুধু দুটি ফ্লোরে ফাউন্ডেশনের কার্যালয় চালু হয়েছে। আর টাওয়ার নির্মাণের পর থেকেই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ফাউন্ডেশনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। নতুন টাওয়ারে উদ্যোক্তারা সরাসরি স্থানান্তর চাইলে তা নাকচ করে দেয় ফাউন্ডেশন।

নোটিশ টাঙানোর পাশাপাশি গতকালই জয়িতা ফুডকোর্টের সব মাল ফাউন্ডেশন সরিয়ে নিয়েছে বলে জানান এত দিন সেখানে কার্যক্রম চালিয়ে আসা উদ্যোক্তা মোসা. আফসানা হক (তুলি)।

জয়িতা ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম বন্ধের নোটিশের পর মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। আজ বুধবার বিকেলের চিত্র

গতকাল জয়িতা ফাউন্ডেশনের পরিচালক-৩ (উপসচিব) মো. নজরুল ইসলামের সই করা এক চিঠিতে উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘জয়িতা ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নর্সের ২৪তম সভায় ২০২৫ সালের ৩১ মার্চের পর রাপা প্লাজায় জয়িতা বিপণন কেন্দ্র ও জয়িতা ফুডকোর্টের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। মালামাল সরানোর জন্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা ৩০ এপ্রিল শেষ হয়েছে। গত ২৪ মার্চের মধ্যে আপনাদের স্টল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আপনারা তা না বুঝিয়ে দিয়ে কতিপয় উদ্যোক্তা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এক মাসের স্থিতাবস্থা দেন। স্থিতাবস্থার মেয়াদ ১৬ এপ্রিল শেষ হয়েছে। রাপা প্লাজা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জয়িতা ফাউন্ডেশনের চুক্তির মেয়াদও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ১৩ মে আদালত আপনাদের দাখিল করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় ১৩ মে থেকে জয়িতা বিপণন কেন্দ্র ও ফুড কোর্টের সব বিপণন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হলো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. নজরুল ইসলাম আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেড় মাস আগেই উদ্যোক্তাদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে উচ্চ আদালত এক মাসের সময় বাড়ানোর ফলে রাপা প্লাজাকে দুটি ফ্লোরের ভাড়া বাবদ এক মাসে ৩০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে ফাউন্ডেশন। এখন আদালত উদ্যোক্তাদের আবেদন খারিজ করে দেওয়ায় আমরা আজ সকালে জয়িতার কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ দিয়ে দিয়েছি।’

রাজধানীর রাপা প্লাজায় বন্ধ হয়ে গেছে জয়িতার ফুড কোর্ট। আজ বুধবার বিকেলের চিত্র

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সরকারি এই কর্মকর্তা বলেন, নতুন ভবনে উদ্যোক্তাদের সরাসরি পণ্য বিক্রির সুযোগ নেই। স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউরের (এসওপি) মাধ্যমে যাচাই–বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের পণ্য নেওয়া হবে। রাপা প্লাজায় স্টল বরাদ্দ পাওয়া জয়িতার উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিকলে তাঁদের পণ্য নেবে ফাউন্ডেশন।

ফাউন্ডেশনের এ সিদ্ধান্তের কারণে কয়েক শ মানুষ কাজ হারিয়েছেন বলে জানান জয়িতা বিপণন কেন্দ্রের উদ্যোক্তা শাহনাজ বেগম। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের শ্রমে ঘামে জয়িতা একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। তারা নতুন ভবন করেছে। ভবনটি নির্মাণের আগে আমাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে ভবনটি সম্পন্ন হলে আমরা সেখানে ব্যবসা করতে পারব। অথচ এখন আমাদেরই সেখানে স্থান হলো না। বিতাড়িত করা হলো। এত বছরের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেল। আমরা চলব কীভাবে?’

কার্যক্রম বন্ধের কারণে দুটি ফ্লোরে কর্মরত অন্তত ২০০ কর্মী বেকার হয়ে গেছেন জানিয়ে শাহনাজ বেগম বলেন, ‘এ ছাড়া জয়িতার পণ্য তৈরির পেছনে প্রত্যেক উদ্যোক্তার নিজস্ব অনেক কারিগর ছিলেন, তাঁরাও কাজ হারালেন।’