Thank you for trying Sticky AMP!!

জিমি কার্টার, আনোয়ার সাদাতসহ ১৫ সাবেক রাষ্ট্রনেতাদের চিঠি আছে তাঁর কাছে

এ টি এম আনোয়ারুল কাদিরকে লেখা ইন্দিরা গান্ধীর চিঠি (বাঁয়ে)। নিজের সংগ্রহশালায় আনোয়ারুল কাদির

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, বাদশাহ, প্রধানমন্ত্রী এবং বিচারপতিরাও চিঠি লিখেছেন এ টি এম আনোয়ারুল কাদিরের কাছে। পাঠিয়েছেন অটোগ্রাফসহ তাঁদের নিজের ছবি। আনোয়ারুল কাদিরের বিশেষ শখ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতার কাছে পত্র চেয়ে চিঠি লেখা এবং উত্তর পেলে সেই চিঠি সংগ্রহ করা।

এ কাজটি তিনি করছেন ষাটের দশকে কিশোর বয়স থেকে। তাঁর সংগ্রহে আছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, সৌদি বাদশাহ খালিদ বিন আবদুল আজিজ, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন, যুগোস্লাভিয়ার প্রধানমন্ত্রী জোসিপ ব্রজ টিটো, মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতসহ বিশ্বের অন্তত ১৫ দেশের সাবেক রাষ্ট্রনেতাদের পাঠানো চিঠি।

তবে আনোয়ারুল কাদিরের নিজের প্রিয় ১৯৭৮ সালে পাওয়া ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর চিঠিটি। এই চিঠি শুধু শুভেচ্ছাবার্তাই নয়, সেখানে আছে ভবিষ্যতের পৃথিবীকে আরও সুন্দর করতে হলে অনেক কাজ করতে হবে, সেসব কথা। সঙ্গে রয়েছে ইন্দিরা গান্ধীর পাঠানো অটোগ্রাফসহ একটি সাদা-কালো ছবি। ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ইন্দিরা গান্ধী যখন মঞ্চে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন কিশোর কাদির। তবে ইন্দিরা গান্ধীকে চিঠি লেখার সাহস পেয়েছেন আরও ছয় বছর পরে।

প্রথম আলোকে আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে চিঠির উত্তর পাওয়ার পর আমার আনন্দ কেমন হয়েছিল বুঝতেই পারছেন। তখন আমাদের জন্য এত কিছু আনন্দের উপকরণ ছিল না। এক অচেনা কিশোরের চিঠির উত্তরে ইন্দিরা গান্ধী লিখেছেন, ‘“একটি সুন্দর পৃথিবীর জন্য আরও অনেক কাজ বাকি আছে” সেই কথা। এর আগে–পরে অনেক চিঠি পেয়েছি। সবই মূল্যবান সম্পদ হিসেবে যত্নে রেখেছি। তবে এ চিঠিটা আমাকে সবচেয়ে বেশি আবেগাক্রান্ত করেছিল।’

আনোয়ারুল কাদিরের আরেকটি বিশেষ শখ ডাকটিকিট সংগ্রহ করা। তিনি বাংলাদেশে ডাকটিকিট সংগ্রাহকদের সংগঠন, ফিলাটেলিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (পিএবি) প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। প্রথম আলোকে আনোয়ারুল কাদির বলছিলেন, ‘প্রযুক্তির কিছু খারাপ দিকের একটি হচ্ছে, হাতে লেখা চিঠির গুরুত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। আগে চিঠির উত্তর পেতাম। সে খামেও থাকত ওই দেশের ডাকটিকিট। এখন আর উত্তর আসে না। তাই লেখাও কমিয়ে দিয়েছি। তবে যেগুলো আছে, সেগুলো দেখে আনন্দ হয়।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহ, আবু সাঈদ চৌধুরী, ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী সি সুব্রামনিয়াম, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, বাংলাদেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ আবুল ফজল চিঠি লিখেছেন আনোয়ারুল কাদিরকে, ছবিসহ অটোগ্রাফও পাঠিয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন বলে চিঠির উত্তরের সঙ্গে একবার ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই নিজের জীবনবৃত্তান্ত পাঠান আনোয়ারুল কাদিরকে।

২০২১ সালে বাংলাদেশ সংগ্রাহক প্রদর্শনীতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরা হয় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে আনোয়ারুল কাদিরের পাওয়া সব চিঠির সফট কপি। এই আয়োজনের অন্যতম একজন উদ্যোক্তা ছিলেন বাংলাদেশ ম্যাচবক্স কালেক্টরস ক্লাবের (বিএমসিসি) প্রেসিডেন্ট সাকিল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আনোয়ার ভাইয়ের এই চিঠি সংগ্রহের শখটি অন্যরকম। আমি তাঁর সব সংগ্রহ দেখেছি। চিঠির সঙ্গে আছে অটোগ্রাফ দেওয়া ছবি। এমন সংগ্রহ শুধু ব্যক্তি উদ্যোগেই সীমাবদ্ধ থাকে না। নতুন প্রজন্মকে উৎসাহী করে।’

পেশাগত জীবনে আনোয়ারুল কাদির সরকারের অডিট বিভাগে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। অবসর নিয়েছেন ২০২১ সালে। ২০০৯ সালে তাঁর ডাকটিকিটবিষয়ক বই শখের রাজা ডাকটিকিট সংগ্রহ প্রকাশিত হয়। বইটি ২০১১ সালে চীনে অনুষ্ঠিত ২৭তম এশিয়া আন্তর্জাতিক ডাকটিকিট প্রদর্শনীতে পুরস্কার পায়। রাষ্ট্রনেতাদের চিঠি এবং ডাকটিকিট সংগ্রহের ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারুল কাদির বলেন, এমন সব কাজে নতুন প্রজন্মের জানার আগ্রহ বাড়ে। অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে বাংলাদেশের খামে একটি চিঠি যখন পৌঁছায়, তখন শুধু একটি চিঠি পৌঁছায় না; বাংলাদেশ নামটি তাঁদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।